দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে শেরে বাংলা ফজলুল হকের নাতি এ কে ফাইয়াজুল হক রাজুসহ মোট ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) ১২ জনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম।
মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- বিএনপি নির্বাচনের মাঠে না থাকায় বরিশাল-২ (বানারী পাড়া-উজিরপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে আছেন শেরে বাংলার নাতি এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বহিরাগত হওয়ায় স্থানীয় আ. লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটা ক্ষুব্দ। কাজেই এবারের ভোটে এ আসনের জনগণ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বেছে নেবেÑ এমন মন্তব্য করেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
বরিশাল-২ সংসদীয় এলাকা বানারীপাড়া-উজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। বরিশালের এ আসনটি ইতিহাস-ঐতিহ্যগতভাবে একটি গুরত্বপূর্ণ আসন। এক সময় দেশি-বিদেশি রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষ এ আসনে এসে ঘুরে যেত, রাজনীতির বিভিন্ন দীক্ষা নেওয়ার জন্য এখানে আসত অনেকেই। কিন্তু এ আসনে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত নেতৃত্বের শক্ত কোনো ভিত তৈরি হয়নি। শুধু ব্যক্তিস্বার্থে এখানের রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। তাই এ আসনে পর পর মেয়াদে দুই বার কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি।
জানা যায়, উপমহাদেশের রাজনীতির কিংবদন্তি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসংবাদিত নেতা শেরে বাংলার পুণ্যভূমি বানারীপাড়ার চাখারে। উপমহাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাতিঘর শেরে বাংলার পুণ্যভূমিতে এমন নেতৃত্বের দন্য দশা হবে- তা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না স্থানীয় জনগণ। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণ বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এখানকার প্রবীণরা আরো জানান, এ সংসদীয় আসনে শের-ই-বাংলা একটি আবেগের নাম। সামনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে জিততে হলে শের-ই-বাংলার এ আবেগ কাজে লাগাতে হবে। কোনোক্রমেই এখানকার মানুষ এ আবেগ বিসর্জন দিবেন না। কেউ এ আবেগের বিপরীতে চললে তাও বরদাস্ত করবে না স্থানীয় জনসাধারণ।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার তরুণদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও শের-ই-বাংলার আবেগ অনেক বেশি কাজ করে। তারা এ পুণ্যভূমির সন্তান হিসেবে নিজেরা গর্ববোধ করে। আবার এ আসনের নেতৃত্বশূন্যতা দেখেও হতাশা ব্যক্ত করেন অনেকে।
সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা হাবিব খান জানান, শের-ই-বাংলা আমাদের এ মাটির সন্তান। তাঁর রাজনীতি আমাকে রাজনীতি করার অনুপ্রেরণা দেয়েছে। জীবন সায়হ্নে এসে আমি বলতে পারি, আমার এ রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলা আমাকে সাহসিকতা শিখিয়েছে, আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে শিখেয়েছে। আমার এ দেহ বঙ্গবন্ধু ও শের-ই-বাংলার দ্বৈত সান্নিধ্য ও চেতনায় গঠিত। কিন্তু আজ কষ্ট লাগে শের-ই-বাংলার এ চারণভূমিতে নেতৃত্বশূন্যতা দেখে। শের-ই-বাংলা এ পলল ভূমিতে দক্ষ নেতৃত্বের ভিত তৈরি হবে- এমনটা আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেরে বাংলার উত্তরসূরি এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ শের-ই-বাংলাকে এখনো এত ভালোবাসেন- তা দেখে সত্যিই আমি অভিভূত হই, বিস্মিত হই। এ প্রজন্মের কাছে শের-ই-বাংলার এখনো এতটা প্রিয় তা দেখে আমি গর্ববোধ করি। আমার পিতা এ কে ফায়জুল হক এ আসনে সংসদ সদস্য হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এ আসনের মানুষের জন্য নির্মোহভাবে কাজ করে গেছেন। নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি এ আসনের সাধারণ মানুষের জন্য নির্মোহ ও নিরলসভাবে কাজ করতে চাই। আমার বাবা ও দাদার রেখে যাওয়া স্রোতধারায় আমি আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট থাকব।