
একটা সময় ছিল যখন বার্ষিক পরীক্ষার আগে স্কুলের বারান্দায় ভেসে আসত দোয়া-মিলাদের সুর। শিক্ষকরা মাথায় হাত রেখে দোয়া দিতেন, অভিভাবকরা কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিজিয়ে তাকিয়ে থাকতেন, আর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগের টানটান উত্তেজনার মাঝেও এক ধরনের পবিত্র শান্তির স্পর্শ পেত। বর্তমানে সেই দৃশ্য ক্রমশ বিরল। তার জায়গা দখল করেছে ক্লাস পার্টি, যেখানে জাঁকজমক, ডিজে, আলো-ঝলমল আর নাচ-গানের উচ্ছ্বাসে ভরপুর আয়োজন আর ভিডিও বানানোর উন্মাদনা।
আর তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর মিরপুর ইংলিশ ভার্সন স্কুল এন্ড কলেজে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের কেজি থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অত্যন্ত আনন্দময় ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে ভিন্নধর্মী ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতানুগতিক ক্লাসের একঘেয়েমি দুর করতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্লাসে ক্লাসে কেক কাটার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরাও অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপে শ্রেণি ভিত্তিক কেক কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস পার্টির উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ইয়াহিয়া খান রিজন। এ সময় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এমেলি খানমসহ সহকারী শিক্ষক, শ্রেণিশিক্ষক ও আগত অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ক্লাসে ক্লাসে কেক কাটার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয়। তারই ফলশ্রুতিতে কেক কাটা পর্ব শেষ হলেই শুরু হয় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাচে-গানে, আবৃত্তি ভাবের আদান-প্রদান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে জমে ওঠে ক্লাস পার্টি এবং উপভোগ করে স্কুল শাখার শিক্ষার্থী। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন করা হয়।
আয়োজন উপলক্ষ্যে মিরপুর ইংলিশ ভার্সন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইয়াহিয়া খান রিজন বলেন, দীর্ঘসময় ধরে পড়াশোনা, পরীক্ষা, টিউশন আর প্রতিযোগিতার চাপ শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। একটু সহপাঠীসুলভ আড্ডা, খাওয়াদাওয়া বা সাদামাটা বিনোদন তাদের মনকে হালকা করে, পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর করে। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যাদের নাচ-গান বা উপস্থাপনায় প্রতিভা রয়েছে; ক্লাস পার্টি তাদের সেই প্রতিভা দেখানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করে। বন্ধুত্ব, দলগত কাজ আর স্মৃতিবিনিময়ের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশেও ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, একটা পার্টি আয়োজন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরই পরিকল্পনা করতে হয়- কে সাজাবে, কে গান বাজাবে, কে কেক আনবে, কে ছবি তুলবে। এই সবকিছু দলবদ্ধভাবে করতে গিয়ে তাদের নেতৃত্ব, দায়িত্ববোধ আর সংগঠনের দক্ষতা বাড়ে। আর ভবিষ্যতে যে কোনো নেতৃত্বমূলক কাজে এসব অভিজ্ঞতা কাজে আসে।
অধ্যক্ষ ইয়াহিয়া খান আরো বলেন, একজন শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দও দরকার। পরীক্ষা-উৎসব-উদযাপন সবই জীবনের অংশ। ক্লাস পার্টি যদি নিয়ন্ত্রিত ও শালীন পরিবেশে হয়, তাহলে এটা পরীক্ষার আগে তাদের চাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। আমরা সবসময় সেই চেষ্টাই করে থাকি।