#২৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রাকিন সিটিতে #৫ আগস্টের পরে ভোল পাল্টে বৈষম্যবিরোধী #চাপাইনবাবগঞ্জে ১০০ মেঃ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পেয়ার পার্টস ক্রয়ে রি-টেন্ডার # কুমিল্লার তিতাসে ৫ মেঃ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিডিউল মেইনটেইনেন্স রি-টেন্ডার #পাবনার বেড়ায়৭০ মেঃ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সেপারেটর রি-টেন্ডার

টেন্ডার মাফিয়া নান্নু মিয়া
পুরো নাম নান্নু মিয়া। কাঁচা-পাকা চুল, চোখে চশমা, গায়ে মার্জিত পোশাক। প্রথম দর্শনেই দেখে বোঝার উপায় নেই যে, রি-টেন্ডারিং (পুনঃদরপত্র আহ্বান), অনিয়ম-দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদ অর্জনে তার জুড়ি মেলা ভার।
আওয়ামি ফ্যাসিবাদের থেকে অন্তর্র্বতী সরকারেও চলমান রয়েছে তার দুর্নীতির মহাযজ্ঞ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন যেন ছুঁতেও পারছে না তার টিকিটিও। বলছিলাম বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিউবো’র ক্রয় পরিদপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নান্নু মিয়ার কথা। ভোরের পাতার দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ৫ আগস্টের পরে বৈষম্যবিরোধী ট্যাগে চালিয়ে যাচ্ছেন তার এই রামরাজত্ব।
রি-টেন্ডারের অনিয়ম
অনুসন্ধান বলছে, চার মাস আগে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আমনুরা এলাকায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের স্পেয়ার পার্টস ক্রয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে রি-টেন্ডার করা হয়। কয়লা চালিত ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ১০ কোটি নয়, বরং ১০ হাজার ১৮৭ টাকা।
কুমিল্লার তিতাসে গড়ে ওঠা গ্যাসচালিত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের শিডিউল মেইনটেন্যান্স রি-টেন্ডারও করা হয় ৩ মাস আগে। এছাড়া পাবনার বেড়ায় ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সেপারেটর রি-টেন্ডার করা হয়। এগুলো শুধু কয়েকটি উদাহরণ, আরও অসংখ্য রি-টেন্ডার করছেন সুচতুর এই কর্মকর্তা।
গুপ্ত ফ্যাসিবাদের মুখোশ
অনুসন্ধান আরও বলছে, গুপ্ত ফ্যাসিবাদের চেহারা আর লুকোছাপা থাকছে না। একের পর এক খুলে যাচ্ছে মুখোশ। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, আলোচিত সরকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের মতো অনেকে দুর্নীতির পথে হেঁটে উঠেছেন সম্পদের চূড়ায়। হয়েছেন দেশান্তরীও। কিন্তু বিউবো’র এই কর্মকর্তা গড়েছেন ভিন্নমাত্রার দৃষ্টান্ত।
হাসিনার পতনের পর ফ্যাসিবাদের মাস্টারমাইন্ড নান্নু এখন বৈষম্যবিরোধীর ট্যাগে রয়েছেন বহাল স্বপদে। বাস্তবে যেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মান্নাদের গান “একই অঙ্গে বহুরূপ”-এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন তিনি।
নান্নুর দায়িত্বপালন
বিদ্যুৎ বিভাগের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ডিজাইন-২ এর ডিডি, ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট বিভাগের পরিচালক এবং লিয়েনে বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্টে কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও দায়িত্ব পালন করেছেন অজবাডিগর বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এ। বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি বিদেশ সফর করেছেন বিউবো’র এই বহুল সমালোচিত কর্মকর্তা।
নান্নুর সম্পদ
বিশেষ সূত্রের বরাত, রাকিন সিটিতে রয়েছে ২৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং ভাসানটেকে নিজস্ব জমিতে বাড়ি।
রাকিন সিটির তথ্য গোপন
কেন ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন? তদন্তে জানা যায়, বিজয় রাকিন সিটির দুই কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক (এফসিএ) ও অবসরপ্রাপ্ত আর্মি মেজর মো. আবুল কালাম এই তথ্য গোপনে জড়িত। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে বিজয় রাকিন সিটির অফিসে সরেজমিনে যান এই প্রতিবেদক। কয়েক ঘন্টা বসিয়ে রেখে প্রতিবেদকে জানানো হয় , হাইকোর্ট থেকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না। এ যেন “চোরে চোরে মাসতুত ভাই” প্রবাদটির বাস্তব রূপ দিল বিজয় রাকিন সিটির এই দুই কর্মকর্তা।
ক্ষমতার প্রভাবে বদলির খেলা
শুধু সম্পদ নয়, বদলির ক্ষেত্রেও দেখিয়েছেন তার প্রভাব। নিজস্ব ক্ষমতা বলে ডিজাইন-১ এর ডিডি মুক্তার হোসেনকে রাউজান প্রকল্প থেকে বদলি করে ঢাকায় এনেছেন। ডিজাইন-২ এর রায়হান রবী খানকে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এনেছেন এবং জনৈক এনামুল নামের কর্মকর্তাকে বদলি করেছেন আইপিবি-তে। এছাড়া পার্চেজ ডিপার্টমেন্টের ডিডি প্রফুল্লকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও প্রভাব খাটিয়ে বদলি বাতিল করিয়েছেন নান্নু নিজেই । এভাবে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে সিদ্ধহস্ত ঘোমরামুখো এই কর্মকর্তা।
অব্যাহত প্রভাব
তাঁর প্রতাপের কাছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা দপ্তরও যেন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। বদলি হোক বা রি-টেন্ডার সব জায়গায় অদৃশ্য ক্ষমতার ছায়া বিস্তার করেছেন এই টেন্ডার মাফিয়া।
এদিকে ২৩,২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি'র) ওয়েবসাইটে দেয়া (০১৯১...........৬১৪) এই নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।