গত দুই মাসে রাজধানীতে তিনটি খুনের ঘটনার নেপথ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম এসেছে। অšত্মত আটটি স্থানে হামলা, জখম, দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মগবাজার, মতিঝিল, বাড্ডা, গুলশানসহ কিছু এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও অন্যের হয়ে ভাড়ায় খাটছে শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ তাদের সহযোগীরা।
সর্বশেষ গত রোববার রাতে বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বিএনপির নেতা কামরম্নল আহসানকে (সাধন) গুলি করে হত্যা করা হয়। কেব্ল টিভি ও ইন্টারনেটের সংযোগসহ চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে ঘটা এ হত্যাকান্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের সহযোগীদের নাম এসেছে। এর আগে ১৯ এপ্রিল হাতিরঝিলে ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য আরিফ শিকদারকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পারে, এ হত্যাকান্ডের নেপথ্যের আছেন সুব্রত বাইন। হত্যার কারণ, হাতিরঝিল, মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের।
গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। আরিফ হত্যার ঘটনায় আগেই মো. মিরাজ ও মো. অনিক নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার আরেক আসামি শুটার মাহফুজুর রহমানকে (বিপু) র্যাব গ্রেপ্তার করে। বিপু শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে র্যাব জানিয়েছে।গত দুই মাসে রাজধানীতে তিনটি খুনের ঘটনার নেপথ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম এসেছে। অন্তত আটটি স্থানে হামলা, জখম, দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে ১৩ মার্চ কুপিয়ে গুরম্নতর জখম করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. রাজনকে। মগবাজারের ওয়্যারলেস রেলগেটের পাশে একটি ক্লাব ঘরের ভেতরে তাঁকে কোপানো হয় এবং মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। মৃত ভেবে তাঁকে ফেলে রাখা হয়। পরে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে ফেরেন রাজন। এর নেপথ্যেও শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় করা মামলার আসামি মোল্লা মাসুদ ও শুটার বিপু।
১১ মে রাজন বলেন, ‘ময়লার টাকা নিয়ে একটি দলের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। এরপর ক্লাবে ঢুকে তারা গুলি করে। গুলি শরীরে লাগেনি। এরপর একটি সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। কাচের অনেকগুলো গস্নাস দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়। এই সন্ত্রাসীরা টাকার বিনিময়ে ভাড়া খাটে।’ তিনি তাদের চেনেন বলে জানান। মগবাজার, মতিঝিল, বাড্ডা, গুলশানসহ কিছু এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও অন্যের হয়ে ভাড়ায় খাটছে শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ তাদের সহযোগীরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর সুযোগ নেয় সন্ত্রাসীরা। আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ছয়জন জামিনে মুক্তি পান। তাদের মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল ও হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন। এ ছাড়া ঢাকার অপরাধজগতের আরও দুই নাম খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন। এর বাইরে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গোপন স্থান থেকে ফিরে প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরম্ন করেছেন অনেকে। তাঁদের কেউ কেউ এরই মধ্যে বিদেশে চলে গেছেন, এমন তথ্যও রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। এ ছাড়া আগে থেকেই যাঁরা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাঁদের অনেকে দেশে ফিরে বিভিন্ন এলাকায় নতুনভাবে তৎপরতা শুরম্ন করেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ দখলের ঘটনায় নাম আসতে থাকে তাঁদের। এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জেরে বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরম্নল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসীদের তৎপরতা রোধে এলাকাভিত্তিক নজরদারি এবং সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করে নজরদারি করছে ডিবি। এতে সন্ত্রাসী তৎপরতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। এখনকার যেসব অপরাধে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম আসছে, সেগুলো বিশেষ গুরত্বর দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য এলাকাভিত্তিক সাঁড়াশি অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর সুযোগ নেয় সন্ত্রাসীরা। আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অšত্মত ছয়জন জামিনে মুক্তি পান।
সুব্রত বাইন ও মোলস্না মাসুদের তথ্যে হাতিরঝিলে গ্রেপ্তার ‘শুটার’ আরাফাত ও শরিফ। সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করে আধিপত্য বি¯ত্মার করছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। জমি ও সম্পদ দখল, কোরবানির পশুর হাটের নিয়ন্ত্রণ, কেব্ল টিভির সংযোগ, ব্রডব্যান্ট ইন্টারনেট ব্যবসা ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে খুন–জখমসহ বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে তারা। সম্প্রতি মগবাজার–হাতিরঝিল এলাকায় কয়েক দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ এলাকার একটি সন্ত্রাসী দল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অস্ত্র আনার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সূত্র। আধিপত্য বিস্তারের এ প্রতিযোগিতায় নিজেদের মধ্যেও খুনোখুনিতে জড়াচ্ছে অনেকে।
এলাকাভিত্তিক নজরদারি এবং সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করে নজরদারি করছে ডিবি। ...যেসব অপরাধে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম আসছে, সেগুলো বিশেষ গুরম্নত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
মোহাম্মদ নাসিরম্নল ইসলাম, ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার যুবদলের সদস্য আরিফ সিকদার হত্যার তদšত্মসংশিস্নষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মগবাজার রামপুরা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের সঙ্গে দুবাইয়ে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। হাতিরঝিল, মগবাজার ও রামপুরা এলাকার বিএনপির যে অংশের সঙ্গে জিসানের যোগাযোগ আছে, তাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন আরিফ সিকদার। এ জন্য সুব্রত বাইনের অনুসারীরা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। ১৪ মে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে কল করে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নিজেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের লোক পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। এর আগে মহাখালী ও নিকেতনের ময়লা–বাণিজ্যের (বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ) নিয়ন্ত্রণের ঘটনায় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাসের নাম আসে। বিদেশি একটি নম্বর থেকে আসা ফোনকল এবং কয়েক দফা হামলার ঘটনায় ২১ থেকে ২৪ অক্টোবর ওই এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ, রাস্তা ঝাড়– দেওয়া এবং নালা পরিষ্কারের কাজ টানা চার দিন বন্ধ ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাড্ডা ও গুলশান এলাকায় বর্তমানে জিসানের সহযোগীদের বাইরে চার সন্ত্রাসী গ্রম্নপ ও তাদের সহযোগীদের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডিএনসিসির আওতাধীন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের এ এলাকার ময়লাবাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছিরের হাতে। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপির নেতারা এর নিয়ন্ত্রণ নেন। এর মধ্যেই সন্ত্রাসী বিকাশের পরিচয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মুঠোফোনে কল দিয়ে ময়লা সংগ্রহের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। কথা অনুযায়ী কাজ বন্ধ না রাখায় কয়েক দফায় হামলা চালানো হয়।
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের সহযোগী ‘শুটার’ মাহফুজুর গ্রেপ্তার
শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ আগারগাঁওয়ে জোড়া খুন, ছাত্রলীগের নেতা জরিপ হত্যাসহ বেশ কয়েকটি হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলার আসামি ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর ২০০৯ সালে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর পালিয়ে যান বিদেশে। বর্তমানে বিদেশে বসেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র।
গুলশান বাড্ডায় নতুন সন্ত্রাসী দল
মতিঝিল এলাকার অপরাধজগতের অন্যতম দুই আলোচিত নাম বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক ও দুবাইয়ে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ। মতিঝিলের বাইরে বাড্ডাসহ রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের খুন, দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধকর্মে বিভিন্ন সময়ে জিসানের নাম আসে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাড্ডা ও গুলশান এলাকায় বর্তমানে জিসানের সহযোগীদের বাইরে চার সন্ত্রাসী গ্রম্নপ ও তাদের সহযোগীদের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে। এই গ্রম্নপগুলোর নেতৃত্বে আছেন সুব্রত বাইন, মেহেদী, রবিন ও বাড্ডার হেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে মেহেদী যুক্তরাষ্ট্রে ও রবিন মালয়েশিয়ায় আছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। রবিনের ভাই হিসেবে এলাকায় পরিচিত মাহবুব এখন এ এলাকায় চাঁদাবাজির ঘটনায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। আর হেলালের বাড়ি উত্তর বাড্ডায়। তবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিনি এলাকা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকায় বেশির ভাগ সময়ে থাকছেন। কখনো কখনো তাঁকে গুলশানেও দেখা যায়। জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাউকে দেখা যায় না। এ জন্য সন্ত্রাসীদের সহযোগী হয়ে যারা কাজ করছে, আমরা তাদের গ্রেপ্তার করছি। এতে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’ গত ২০ মার্চ রাতে গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমনকে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রগুলো জানায়, কেব্ল টিভি সংযোগ ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসার আড়ালে সন্ত্রাসী দলের হয়ে কাজ করতেন সুমন। বাড্ডা–গুলশান এলাকার রবিন গ্রম্নপের সদস্য ছিলেন তিনি।
মোহাম্মদপুরে সেনা অভিযানে ‘এক্সেল বাবু’সহ গ্রেপ্তার ৪
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাড্ডা এলাকায় বিদেশি পিস্তল, গুলি, ম্যাগাজিনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুমন। গত ১৭ জানুয়ারি চাঁদা না পেয়ে বাড্ডায় এক ব্যক্তিকে গুলি করে আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর জামিনে বের হওয়ার পর তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব জানিয়েছে, গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ত্রাসী মেহেদী ও রবিন গ্রম্নপের বিরোধের জেরে খুন হন সুমন।মেহেদীর নির্দেশে তাঁকে খুন করতে পাঁচজনের একটি ‘কিলার গ্রম্নপ’ কাজ করে। সুমন হত্যার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে র্যাব জানায়, ওয়াসির মাহমুদের মাধ্যমে গুলশান ও বাড্ডা এলাকার চাঁদা সংগ্রহ করতেন সন্ত্রাসী মেহেদী। সন্ত্রাসী রবিন গ্রম্নপের হয়ে একই এলাকায় চাঁদাবাজি শুরম্ন করেন সুমন। গুলশান এলাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মেহেদী গ্রম্নপের সঙ্গে রবিন গ্রম্নপের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এ বিরোধের জেরে মেহেদীর নির্দেশে সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওয়াসির মাহমুদ। ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের ঘোষণা করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম ছিলেন সুব্রত বাইন। তাঁকে ধরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, বর্তমানে ফার্মগেট ও আশপাশের এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলামের কিছু তৎপরতা রয়েছে। মহাখালীতে কিছু অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্তরা নিজেদের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমাম হোসেনের সহযোগী বলে পরিচয় দিয়েছে।
অপরাধীরা অধরা, আত্নগোপনে
অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে কিংবা গোপন স্থান থেকে প্রকাশ্যে এসে এলাকায় নানাভাবে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা শুরম্ন করেছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনও ছিলেন এই দলে। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ মগবাজারের বিশাল সেন্টারে আসেন সুব্রত বাইন। এতে বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। এলাকায় তার উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে এ এলাকার চাঁদাবাজি ও খুন–জখমের একের পর এক ঘটনায় তাঁর নাম আসতে থাকে।
১৬ মে মগবাজার ও হাতিরঝিল এলাকায় আরিফ শিকদার হত্যার বিচার দাবিতে অলিগলি দেয়ালে পোস্টার দেখা যায়। পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘৩৬ নং ওয়ার্ড হাতিরঝিল থানা যুবদলের সক্রিয় কর্মী আরিফ শিকদার হত্যার বিচার চাই।’ নিচে লেখা, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল, হাতিরঝিল থানা, ঢাকা মহানগর উত্তর।
২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের ঘোষণা করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম ছিলেন সুব্রত বাইন। তাকে ধরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। এখনো তার নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। নোটিশ অনুযায়ী সুব্রত বাইনের বয়স ৫৬ বছর। গতকাল কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুব্রত বাইনের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে। সুব্রত বাইন গ্রেপ্তার হলেও মগবাজার, মতিঝিল, বাড্ডা ও গুলশান এলাকায় সক্রিয় অন্য সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সুযোগ কাজে লাগিয়েছে সন্ত্রাসীরা
অপরাধবিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরম্নত্বর থেকেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন ছিল। কাজটি ঠিকভাবে হয়নি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তাদের অপরাধের জাল আরও বিস্তৃত হবে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বন্ধে দেশে তাদের হয়ে যারা কাজ করছে, তাদের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে।