
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ইসলামী স্থাপত্যের আনেক ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন রয়েছে। ট্যুরিজমের প্রয়োজনীয় উপাদান থাকলেও পরিকল্পনা ও সরকারি বিনিয়োগের অভাবে দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিল এ জেলার পর্যটন খাত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যক্তিগত উদ্যেগে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠছে নতুন বিনোদন কেন্দ্র, বাড়ছে পর্যটকের আগ্রহ।
উদ্যোক্তারা জানান, পর্যটকদের চাহিদা মাথায় রেখে নতুন স্পট তৈরি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। তবে সরকারি সহায়তা না থাকায় বড় ধরনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের মতে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। নদী-বিল, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং আমকে কেন্দ্র করে এ জেলায় রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা।
শিবগঞ্জ উপজেলাতেই রংধনু পার্ক, সোনামসজিদ গৌড় শিশুপার্ক ও কিডস ল্যান্ড, এ তিনটি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে বেসরকারি বিনিয়োগে। শহরে তৈরি হয়েছে জোসনারা শিশু পার্ক। নাচোলে ১০০ বিঘা জমিতে আধুনিক রিসোর্ট নির্মাণে কাজ করছেন এক শিল্পপতি।
২০১৭ সালে মহানন্দা নদীর তীরে ৪৪.৫ একর জমিতে বড় একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণে প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। ছয়তলা হোটেল, ম্যাঙ্গো মিউজিয়াম, অ্যাম্ফিথিয়েটারসহ বহু সুবিধা রাখার পরিকল্পনা থাকলেও কয়েক বছরে হয়েছে শুধু সীমানা প্রাচীর ও ভূমি উন্নয়ন। ফলে প্রায় ৯২ কোটি টাকার এ প্রকল্প এখন অনিশ্চয়তায়।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কালেক্টরেট শিশু পার্ক পুনর্বিন্যাস ও সৌন্দর্যবর্ধনের পর নতুন রূপে খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলা শহরের নাখেরাজপাড়া এলাকায় কালেক্টরেট চত্বরসংলগ্ন স্থানে অবস্থিত এ পার্কটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকলেও পুনর্র্নিমাণের ফলে এখন আবার শিশু-কিশোরদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ৩ মে ২০২৩ বিকেলে পার্কটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও, পুলিশ সুপার এ এইচ এম আব্দুর রকিব, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে, আর উদ্বোধনের পর থেকেই শিশু- কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড় এখানে চোখে পড়ার মতো।
এদিকে প্রাচীন গৌড় নগরীর ঐতিহ্যবাহী এই অঞ্চলটি ইতিহাস ও স্থাপত্যকলার এক অনন্য ভান্ডার। সোনামসজিদ, দারাসবাড়ী, ছোট সোনা মসজিদসহ অসংখ্য নিদর্শন আজও মধ্যযুগীয় বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় সমগ্র গৌড়-বঙ্গের রাজধানী হিসেবে বিকশিত এই নগরীর রাজপ্রাসাদ, মসজিদ, প্রশাসনিক স্থাপনা ও প্রতিরক্ষা প্রাচীরের চিহ্ন আজও দর্শনার্থীদেরকে অতীতের জৌলুস ও স্থাপত্যশৈলীর মহিমা অনুভব করায়। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ এলাকা শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থানই নয়, বরং বাংলা ও উপমহাদেশের দীর্ঘ ঐতিহ্যের জীবন্ত স্মারক হিসেবে এখনও গৌরবের স্মৃতি বহন করে আসছে।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত যা রামদাশ বিল হিসেবে পরিচিত। এটি একটি প্রাকৃতিক জলাভূমি, যা “মিনি কক্সবাজার” নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই বিলটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এবং পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এটি বিশেষ করে বর্ষাকালে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক রাইয়ানুল ইসলাম লুনা বলেন, সরকারি বিনিয়োগের অভাবই বড় বাধা। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ট্যুরিজমের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং পুরো জেলার অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে।