শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা সদর থানা মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে, শুক্রবার বিকালে ওই ব্যবসায়ীকে মাকসুদের অফিসের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ। নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী সাদাত শনিবার সকালে মাকসুদ খাঁন ও তার ম্যানেজার মহসিন আলীসহ পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাউদ মোহাম্মদ সাদাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামের মৃত সামশুল আলম চৌধুরী ছেলে। মামলার আসামিরা হলেন, ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান, তার ম্যানেজার মহসিন হোসেন, অফিসের কর্মচারী আকাশ, রাজিব ও মাকসুদের চাচাতো ভাই টফি।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাউদ মোহাম্মদ সাদাত জানান, আমি গত দুই তারিখে ব্যবসায়িক কাজে ভোমরা স্থলবন্দরে আসি। মাসুদ ভাইয়ের সাথে আমার কিছু ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় এ কারণে ঐদিন তার অফিসে যায়। এসময় তার ম্যানেজার আমাকে বলে মাকছুদ ভাই ইন্ডিয়ায় গেছে আপনার মোবাইল দুটো নিয়ে আপনাকে আটকে রাখতে বলেছে। পরের দিন থেকে বিগত ১০ দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত আমি মাসুদ ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি তার অফিসে। তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন লোক মারফত আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। এরপর মঙ্গলবার তিনি এসে কোন কথা ছাড়াই এস এস এর পাইপ দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটায়। পিটানোর পরে অনেক গালাগালি করে, এবং রোববারের মধ্যে টাকা না দিলে মেরেফেলে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত বলেন, মাঝেমধ্যে তারা আমার কাছে মোবাইল ফোন দিত এবং তাদের সামনেই আমি আমার পরিবারের সামনে কথা বলতাম। চট্টগ্রামের চাটগাইয়ের ভাষায় কথা বলায় আমার পরিবারের সাথে কি কথা হচ্ছে সেটি তারা বুঝতে পারেনি। এ কারণে আমি আমার অসুবিধার কথা আমার পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারি। আমি সেখানে থাকাকালীন সময় এবং তাদের কাছ থেকে শুনেছি তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে এভাবে আটকে রেখে টাকা আদায় করে থাকে। এমনকি ওই অফিসের মধ্যেই অনেককে নির্যাতন করে। তিনি বলেন, আমাদের পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে আমরা সাতক্ষীরার স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি অবগত করতে পারি। পরে সাংবাদিক ও পুলিশের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করে পুলিশ। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ভোমরা বন্দরে সিএন্ডএফ এ্যাশোসিয়েশনের ভোট না হওয়াতে ভোমরা বন্দর আজ ব্যবসায়ী শূন্য হতে বসেছে। মাকসুদ খানের মতন অযোগ্য লোক বন্দরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ারর কারনে এই বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, মাকসুদ খান কোন রশিদ ছাড়া প্রতি গাড়ি থেকে ২০০ টাকা চাঁদা তুলে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ফলে সঠিক ভাবে ব্যাবসা করতে পারছিনা আমরা। বড়বড় আমদানি কারকরা বন্দর থেকে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। অহিদুল ইসলাম বলেন, এখন শুনছি চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে তার অফিসের টর্চার সেল তৈরিকে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করেআসছিরো। তাকে ১৫ দিন আটকে রেখেছিলো মাকসুদ খান। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই ভোমরা বন্দর আগের মত ব্যবসা বান্ধব বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক এবং অচিরেই ভোমরা সি এন্ডএফ এ্যাসোশিয়েশনের ভোটের মাধ্যমে যোগ্য ব্যাক্তি নেত্রিত্বে আসুক।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক আহবায়ক ও সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, মাকসুদ খান ও আমার অফিস একই ভবনে। গতকাল হঠাৎ জানতে পারলাম তার অফিসে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে ১৫ দিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করেছি। এটি খুব দুঃখজনক ঘটনা। তাদের কারণে ব্যবসাটা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
তবে শুক্রবার রাতে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান জানান, সাউদ সাদাতের সাথে চারমাস ধরে ব্যবসা চলছিল। লেনদেনও ভালো ছিল। তবে কোরবানি ঈদের দশদিন আগে তার কাছ থেকে এক কোটি ২৩ লাখ টাকার শুকনা মরিচ, রসুন, পেয়াজ নিয়ে আর টাকা দেননি তিনি। এবিষয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারি থানা ও সাতক্ষীরা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। তাকে আটকে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার ম্যানেজারের সাথে একসাথে একরুমে থাকতো, খাওয়া-দাওয়া করতো। ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার তার পাওনা ৫০লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা যাতে না দিতে হয় সেজন্য তিনি এই অপহরণের নাটক তৈরী করেছেন । সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ীকে ভোমরায় আরেকজন ব্যবসায়ী আটকে রেখেছেন-তাঁর কাছে এমন অভিযোগ আসে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। পরে শনিবার সকালে ব্যবসায়ী সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত বাদী হয়ে ১৬৫ ধারায় সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি মাকসুদ খান ও তার ম্যানেজার মহসিনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।