প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩, ৯:৫০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

একসময় পয়লা বৈশাখে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমান সময়ে সে চিত্র একেবারেই আলাদা। এখন বোরো,রোপা আমন ধান ঘরে তোলার সময়কে কেন্দ্র করে গ্রাম গঞ্জে ব্যবসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ধান ঘড়ে তোলার সময় না হলেও গ্রামবাংলার মানুষ হালখাতার সাথে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। সচরাচর বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হলেও এবার ব্যতিক্রমী হালখাতার আয়োজন হয়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের আটঘরিয়া গ্রামে কৃষক নুরনবীর বাড়িতে।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে দেখা যায় এক ব্যতিক্রম হালখাতার আয়োজন। ব্যবসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করলেও এখানে একজন কৃষক শ্রমিকের আয়োজনে চলছে এই হালখাতার অনুষ্ঠান।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার আটঘরিয়া এলাকায় মৃত শুকুর আলীর ছেলে কৃষক নুরনবী এই ব্যতিক্রম হালখাতার আয়োজন করে। তার হালখাতায় আসা কৃষক কেতন চন্দ্র দে বলেন, এখানে আমরা যার হালখাতায় এসেছি সে যেমন কৃষক তেমন হালখাতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি ব্যক্তিই কৃষক। আমরা বোরো, রোপা আমন ধান আবাদে কৃষক নুরনবীর পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করি। জমি চাষের সময় সার, বীজ সহ নিত্য প্রয়োজীয় জিনিসপত্র কিনতে হাতে তেমন টাকা পয়সা থাকে না। তাই আমরা ধান রোপনের পর জমিতে হাল চাষের টাকা পরিশোধ করি। আর এই টাকা পরিশোধের জন্য পাওয়ার টিলারের মালিক হালখাতার ব্যবস্থা করেন। অনেক নারী-পুরুষ হালখাতায় এসেছেন। কেউবা পুরোনো বছরের বাকি থাকা টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছেন। আর পাওয়ার টিলারের মালিক গ্রাহকদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করছেন।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন আর আগের মতো পয়লা বৈশাখে হালখাতা হয় না। ওই দিন ব্যবসায়ীরা নিয়ম রক্ষার জন্য শুধু নতুন খাতা ‘শুভক্ষণ’ করে রাখেন। এর কারণ রায়গঞ্জের অর্থনীতি কৃষিনির্ভরশীল। ১লা বৈশাখের সময় ক্ষেতের ধান কাঁচা থাকে। তখন মানুষের হাতে টাকা থাকে না। ফলে ব্যবসায়ীদের দোকানের বাকি টাকা ঐ সময় পরিশোধ করতে পারেন না কৃষকেরা। তাই বাকি আদায়ের জন্য বোরো ধান কাটার পর উপযুক্ত সময়। হালখাতায় বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে আসা কৃষক আব্দুর রশিদ সরকার বলেন, বেশ ভালোই লাগছে। হালখাতা উপলক্ষে চলতি মৌসুমের হাল চাষের বাকি টাকা পরিশোধের পর পাওয়ার টিলারের মালিক মিষ্টি দিয়ে খাইয়েছেন।
হালখাতায় বাকি টাকা কেমন আদায় হচ্ছে জানতে চাইলে পাওয়ার টিলারের মালিক কৃষক নুরনবী ভোরের পাতাকে বলেন, আমি মোট ১৫০ বিঘা জমিতে হাল চাষ দিয়েছি তার মধ্যে ১৩০ বিঘা জমির ১৩৩ জন কৃষকের ১ লাখ দশ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা সাধারণত জমি চাষের সময় সার,বীজসহ নিত্যপ্রয়োজনিয় পণ্য ক্রয় করে টাকা শেষ করে ফেলেন। তাই এ সময়ে জমিতে হাল চাষের টাকা তাদের কাছে কম থাকে। তাই আমরা ডিজেল চালিত পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে কৃষকের জমি বাকিতে হাল চাষ করে দিয়েছি। এখন জমিতে ধানের চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিটি কৃষক। ঠিক এ সময়েই আমি হালখাতার আয়োজন করেছি। যা প্রতি বছর করে থাকি। কৃষকরা আমাকে তাদের বকেয়া টাকা দিতে আসছেন। আশা করি সম্পূর্ণ বকয়ে আদায় হবে।