
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া খেলাধুলা ও সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব নয়।
শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পুরস্কার-২০২৩ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে ব্যাবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমাসহ অনেক কিছু করে দিয়েছি। বেসরকারি খাত অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। খেলোযাড়রাই তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম সব জায়গায় তুলে ধরতে পারবেন। সেক্ষেত্রেও ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দরকার। বাংলাদেশের মেয়েরা এত স্বল্প সুযোগের মধ্য দিয়েও এভারেস্ট বিজয় করছে, ক্রীড়াক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখছে। এই সুনাম বাড়ানোর জন্যই পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
তিনি আরো বলেন, যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য আরো অনেক সুনাম বয়ে আনবে। যাদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে- আপনারাও কিন্তু একজন ক্রীড়াবিদকে চাকরি দিতে পারেন বা আপনাদেরও একটা ক্রীড়া সংগঠন থাকতে পারে। সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিভা ছড়িয়ে আছে। সেসব প্রতিভাকে আপনারা কুড়িয়ে আনুন, তাদের সুযোগ করে দিন। বাংলাদেশের জন্য এরাই সবচেয়ে বেশি সুনাম বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যতক্ষণ আছি দিয়ে যাচ্ছি। যাদের ঘর নাই, তাদের ফ্লাট তৈরি করে দেওয়া বা জমি দেওয়া, খেলাধূলার সরঞ্জাম প্রদান বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বা চিকিৎসা করিয়ে বিদেশ থেকে আনা- সব করে যাচ্ছি। চিরদিন তো আমি থাকবো না। কাজেই দেশের ক্রীড়াবিদরা যেন ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারে সেজন্যই বিত্তশালীদের আহ্বান করছি- আপনারা উদ্যোগ নিন।
সরকার প্রধান বলেন, অনেক গরিব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের জন্য স্বর্ণ জয় করে আনছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধীরা স্পেশাল অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করছে, দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে। তারা যেন এসব প্রতিযোগিতায় প্রতিবার অংশ নিতে পারে সেজন্য সরকারের সহযোগিতা চলমান রয়েছে।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা, বঙ্গমাতা, শেখ কামালসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হারানোর স্মৃতিরোমন্থনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাসটা আমাদের শোকের, কষ্টের ও বেদনার মাস। এ মাসেই কামালের জন্মদিন। কামাল আমার ছোট, আমরা পিঠাপিঠি ভাই-বোন। খেলার সাথী, আন্দোলন-সংগ্রামেও এক সঙ্গেই ছিলাম। আমার, আমাদের পরিবার এবং সমগ্র জাতির জন্য আগস্ট অত্যন্ত মাস।
শেখ কামালের সাদাসিধে জীবনযাপন সম্পর্কে তিনি বলেন, তার ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। সে অত্যন্ত বিনয়ী, নির্লোভ, নিরহংকার ও সদালাপী ছিল। সে কখনোই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতো না। কামাল পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অনেক দায়িত্বশীল ছিল। তার সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল প্রবল। সে বেঁচে থাকলে আমাকে হয়তো আজ এত বড় দায়িত্ব নিতে হতো না।
খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ব্যাডমিন্টনের মতো বিভিন্ন খেলার সঙ্গে জড়িত থাকায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে। সে আবাহনী লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে দেশের ফুটবল খেলার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ অবদান রেখেছে। খেলাধুলার পাশাপাশি শেখ কামাল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। সে নাটকেও ভালো অভিনয় করতো।
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া শিক্ষা বৃত্তি’ প্রদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তিনি ‘শেখ কামাল: ক্ষণজন্মা এক নক্ষত্র’ নামে একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জীবন ও কর্মকাণ্ডের ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রমুখ।