
দিনের পর দিন বিনা অনুমতিতে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করা, স্বেচ্ছাচারি আচরণ প্রদর্শন, সরকারি আদেশ অমান্য করে বদলিকৃত স্থানে যোগদান না করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ও বিভাগীয় মামলা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক উপপরিচালককে দেয়া হয়েছে পদোন্নতি। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের প্রশ্ন এতো অনিয়ম-অপরাধের পরও শাস্তির বদলে পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বেগম সাবিনা পারভীনের খুটির জোর কোথায়? তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিসে অনুপস্থিত থাকা, অন্যত্র বদলি করা হলেও নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করা, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে সাবিনাকে মুন্সিগঞ্জ বদলি করা হলে, তিনি তা পুনঃবিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয় আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সিনিয়র সহকারি সচিব ফৌজিয়া খান একই বছর ৯ অক্টোবর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উদ্দেশ্যে লিখিত জবাব দেন। এতে বলা হয়, বদলির আদেশ পুন:বিবেচনার সুযোগ নেই। বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করায় তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। ৩ মে ২০১৮ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর হতে অবমুক্ত করার পর কিভাবে তাকে ওই মাসের বেতন/ভাতা প্রদান করা হয়, তার ব্যাখাও চায় মন্ত্রণালয়।
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বরে এসব নিয়মবহির্ভুত কর্মকান্ডের কারণে সে সময়ে সাবিনার বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) সেলিনা আক্তার প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে গুরুতর কিছু অপরাধের ফিরিস্তি তুলে ধরে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়। সেলিনা আক্তারের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সাবিনা পারভীন সহকারী প্রধান ১ ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার(পিএম) হিসেবে ২৯ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা ইউনিটে যোগদানের পর থেকে মর্জি মাফিক দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পাদন ও প্রাধিকার প্রাপ্ত না হওয়া সত্ত্বেও সরকারি গাড়ি ব্যবহারের চেষ্টায় লিপ্ত হন। তার অসহযোগিতার কারণে সরকারের উন্নয়ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে খেয়ালখুশি অনুযায়ী অফিসে আগমণ-প্রস্থান এবং নিজ কর্তৃত্ব প্রদর্শনের জন্য নানা ধরনের তদবির ও অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। অভিযোগে আরো বলা হয়, করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালে কোভিড-১৯ প্রার্দূভাব বাড়ায় এপ্রিল মাস থেকে ওই বছরের জুন মাসের মধ্যে হাতেগুনা মাত্র কয়েকদিন অফিস করেন সাবিনা। এসময় তার অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে অফিস থেকে ইমেইল পাঠানো হলে, তিনি তার জবাব দেননি। পরে ১৮ জুন ফের আরেকটি ইমেইল পাঠানো হলে, এর জবাবে তিনি জানান, ৭ জুন হতে তার স্বামী কোভিড-১৯ আক্রান্ত। সে কারণে তিনি অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে উল্লেখ করে জানান, এবিষয় কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। কিন্তু অভিযোগে বলা হয়, বিষয়টি আদৌ সত্য নয়। এতে আরো বলা হয়, তার আবাসিক এলাকা রেডজোনভুক্ত হিসেবে সাটডাউন/লগডাউন থাকার তথ্য এক ধরনের মিথ্যাচার; যা অসদাচরণের সামিল। ওই চিঠিতে আরো বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে কর্মচারী বিধিমাল ২০১৮ অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়।
এরপর ২০২২ সালে অপর এক চিঠিতে সে সময়ের পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. শফিকুর রহমান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, সাবিনা পারভীনকে বার বার সতর্ক করা হলেও তিনি পূর্বের ন্যায় আচরণ অব্যাহত রেখেছেন। এসময় তিনি কালেভদ্রে অফিসে আসলেও নিজ কক্ষের দরজা বন্ধ করে রাখতেন। এমনকি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কোনোরূপ যোগাযোগ করতেন না। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন না। এছাড়া সম্প্রতি অধিদপ্তরে ফেস ডিটেক্টিং অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম চালু করা হলেও, তিনি তা মানছেন না।
এসব বিষয় জানতে পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া বেগম সাবিনা পারভীনের সঙ্গে কথা বলতে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসিয়াল ল্যান্ডফোনে বহুবার কল করলেও রিসিভ করেননি কেউ। এ সম্পর্কে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু বলেন, সম্প্রতি সাবিনা পারভীন পদন্নতি পেয়েছেন। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে অভ্যন্তরিন অভিযোগ উঠেছে। যা তদন্তও করা হয়েছে।
নানা অনিয়ম, স্বেচ্চারিতা ও বিভাগীয় মামলা থাকা সত্ত্বেও সাবিনা পারভীনকে কি করে পদোন্নতি দেয়া হলো জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিষয়টি হাসপাতান অনুবিভাগ দেখাশুনা করেন। তবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।