বাংলাদেশে অবাধ, স্বচ্ছ এবং পক্ষপাতহীন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের চিঠির প্রতিবাদ করেছেন ইউরোপপ্রবাসী ৩২১ বাংলাদেশি।
‘বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ’ নামের একটি সংগঠনের নামে পাল্টা চিঠিতে ইউরোপপ্রবাসী এই বাংলাদেশিরা বলেছেন, ওই চিঠি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে লেখা ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টামাত্র।
গত ১২ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় এমপি স্লোভাকিয়ার স্টেফানেক ইভান, চেক প্রজাতন্ত্রের মাইকেলা সোজড্রোভা, বুলগেরিয়ার আন্দ্রে কোভাতচেভ, ডেনমার্কের কারেন মোলচিওর, স্পেনের জেভিয়ের নার্ট ও ফিনল্যান্ডের হেইডি হাউটালা ওই চিঠি দিয়েছিলেন জোসেপ বোরেলকে।
এই ছয় এমপির মধ্যে স্লোভাকিয়ার স্টেফানেক ইভান ইইউ পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় এবং পুরোনো গ্রুপ ইপিপি সদস্য। তিনি এর আগে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপকে বাংলাদেশ ইস্যুতে চিঠি দিয়েছিলেন।
চিঠিদাতা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই ছয় সদস্যের বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো পূর্বাভিজ্ঞতা নেই বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ৩২১ বাংলাদেশি।
চিঠিতে তারা বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য যে প্রতিনিধিদল রয়েছে, সেসব কমিটির সদস্য না হয়েও তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খর্ব করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে চিঠিটি লিখেছেন।
‘বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ’ নামের সংগঠনটিতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নানা পেশার প্রতিনিধিরা আছেন।
চিঠিতে তারা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক গুম শুরু হয়।’
‘মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে কয়েক হাজার সামরিক বাহিনীর সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জিয়ার বিএনপি সরকার বাংলাদেশের সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) পরিবর্তন করে, যা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এবং ৯ এপ্রিল ১৯৭৯-এর মধ্যে সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপকে বৈধ করে। ১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অধীন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যার ধারা অব্যাহত রেখেছিল।’
চিঠিদাতা বাংলাদেশিরা আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন প্রতিহত করতে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সেসময় তারা শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের পেট্রল বোমা, হাতে তৈরি বোমা ও অন্যান্য ধরনের সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ সদস্যসহ প্রায় ২০০ ব্যক্তি নিহত হয়।’
‘২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশ নেয় এবং কয়েকটি আসনে জয়লাভ করে। অন্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। মধ্যরাতের নির্বাচনের অভিযোগটি ছিল গুজব ও মিথ্যা তথ্যের কাজ, যা কখনো প্রমাণিত হয়নি।’
এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে, বিশেষ করে ২০০১ থকে ২০০৬ সময়কালের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে। বিএনপির লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কারণে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে ইউরোপের এই বাংলাদেশিরা।