বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৭ ভাদ্র ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব    নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি    নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির    দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!    মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি    প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)    নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা অভিন্ন
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩, ১২:১১ পিএম আপডেট: ২৩.০৬.২০২৩ ১:৩৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ

আজ ২৩ জুন ২০২৩; আওয়ামী লীগের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আওয়ামী লীগ এ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন দল। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অর্জন অনেক। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে কোন স্বাধীন ভূখণ্ড ছিল না। আওয়ামী লীগ অতুলনীয় রাজনৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন বিশ্বমানের একজন নেতা তৈরি করেছে। বিশ্ব রাজনীতির হাজার বছরের ইতিহাসে একটি রাজনৈতিক দলের একজন নেতার একক নেতৃত্বে মাত্র ২২ বছরের কম সময়ের মধ্যে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার কোনো দ্বিতীয় নজির নেই। শেখ মুজিব তাঁর ৪ দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ঠিক তেমনিই জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা হিসাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। এই করোনাকালীন মহামারির সময়েও একক নেতৃত্ব আর দূরদর্শিতার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এ যেন রাজনৈতিক পরম্পরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু লড়াই, সংগ্রাম আর আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। তাঁর কন্যা হিসাবে শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে দিতে বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল জাতিতে পরিণত করছেন। 

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। তারপরের ব্রিটিশদের অধীনে গিয়ে অমানিশায় তলিয়ে যায় যেন বাংলার স্বাধীনতা। নেমে আসে শোষণ, অন্যায়-অনাচারের খড়গ। সাতচল্লিশে মুক্ত হয়েও বাংলা ও বাঙালির ভাগ্যাকাশের কালো মেঘ কাটেনি। দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তান যে আশা-আকাঙ্খা লালন করেছিলো, যে প্রত্যাশা নিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য বাংলার জনগণ আন্দোলন করেছিলো দেশভাগের পরে তার সম্পূর্ন বিপরীত আচরণ শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। তাই দেশ ও জনগণের সার্বিক মুক্তি ও অধিকার নিশ্চিত করতে পলাশীর প্রান্তরে পরাজয়ের দুশো বছর পরে সেই একই ২৩ জুন, ১৯৪৯ সালে বাংলার আকাশে নতুন সূর্যের আগমন ঘটে; যার নাম 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।' ঢাকার রোজ গার্ডেনে মাওলানা ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারন সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক করে যাত্রা শুরু করে উপমহাদেশের প্রাচীণ এ রাজনৈতিক দলটি। ধর্মীয় বৈষম্য দূরীকরণে পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক এক রাজনৈতিক দল গঠনের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৫৫ সালে নামের সামান্য পরিবর্তন করে দলের নাম হয় 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।' স্বাধীনতার পর এর নাম হয় 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'।

জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত গণমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দল-মত নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করবেন স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে ২৩ বছরের যে অন্যায়, অত্যাচার ও অপশাসনের কালো ইতিহাস তৈরি হয়েছিল সেখানে একমাত্র আওয়ামী লীগই জাতিকে পথ দেখিয়েছে। পূর্ব বাংলার জনগণকে তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে শোষন-বঞ্চনার যে অপরাজনীতি পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী শুরু করেছিলো তার বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে প্রকাশ্যে জনমত গড়ে তুলে প্রতিবাদ শুরু করেছিলো পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্ন'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী ছেষট্টির ছয় দফা, 'কিংবা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান- যেখানেই তাকাবেন বাংলার সাধারন জনগনের প্রতিটা যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসেনানী হয়ে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলার জনগনও আওয়ামী লীগের উপর আস্থা রেখে সত্তরের নির্বাচনে ভোট দিয়ে নিরুঙ্কুশ বিজয় এনে দেয় দলটিকে। সমান্তরালভাবে আরেকটি বাস্তবতা ছিলো সেই বিজয়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি বাংলার প্রতিটা দুঃখী মানুষের মনে ভাষাই যেন‌ সবচেয়ে ভালো পড়তে পারতেন। এদিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিপুল ভোটে বিজয় অর্জনের পরেও পাক শাসকরা ক্ষমতা ছেড়ে দিতে আপত্তি জানায়। বঙ্গবন্ধুর তখন বুঝতে বাকি থাকেনা স্বাধীনতা আন্দোলনের বিকল্প কোন পথ আর খোলা নেই। এই উপলদ্ধি আওয়ামী লীগকে যেকোনো পরিস্থিতিতে তৈরি থাকতে উদ্বুদ্ধ করে।

ইতিহাস নির্দ্বিধায় স্বীকার করবে আওয়ামী লীগ মানে বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঐতিহাসিক ৭ মার্চে রেসকোর্সের ময়দানে বজ্রকন্ঠে বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, "পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।" আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পুরো দেশ যখন একতাবদ্ধ তখন বঙ্গবন্ধু সহজেই বলতে পেরেছেন - 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হবার পূর্বে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে যান। সেই ঘোষণা অনুযায়ী দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকলেও তার বিশ্বস্ত সহচর আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমেদ, এ.এম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মত জাতীয় নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে এবং পরের বছরের ১০ জানুয়ারি বিজয়ের মহানায়ক ফিরে আসেন তার নিজের সৃষ্ট স্বপ্নের বাংলাদেশে। সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আবার নতুন উদ্দ্যমে কাজ শুরু করেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ঢেলে সাজাতে। যার ঢাল ছিলো আওয়ামী লীগ। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শকুনেরা স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। একই সাথে আওয়ামীলীগকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা করে। তারপরের ইতিহাস বেশ করুণ। অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসা অবৈধ সরকার দেশবিরোধী রাজাকারদের পুর্নবাসন করেন। আওয়ামী লীগকে কোনঠাসা করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এরপর সেনা অভ্যুত্থান, স্বৈর শাসন আর গণতন্ত্র হারিয়ে দেশ প্রায় দিশেহারা হয়ে যায়। বাংলার আকাশে কালো মেঘের ছায়া এসে পড়ে।

রাজনৈতিক কঠিন সংকটের মধ্যেও দেশের এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসে আওয়ামী লীগ। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মনোনিবেশ করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৭ মে দেশে ফিরে আসার মাধ্যমে আওয়ামীলীগের নবযাত্রা শুরু হয়। জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পিতার দেখানো পথে শেখ হাসিনা রাজপথে নামেন আর জনগনের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। উনিশশো নব্বই সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরুর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের কলঙ্ক মোছনের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে "দিন বদলের সনদ" ইশতেহার দিয়ে আবার জনগনের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে আওয়ামীলীগ। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ক্ষমতা গ্রহণের পরে একে একে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করেন। যা ছিলো প্রতিটা বাঙালির প্রাণের দীর্ঘ চাওয়া। ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আওয়ামীলীগ অনুন্নত এক বাংলাদেশ থেকে উন্নয়নশীল এক বাংলাদেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবেও বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত।

দল‌ হিসেবে আওয়ামী লীগ তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নগর-গ্রাম, ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে যত কাজ করেছে তা সব রাজনৈতিক দলের কাছে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গ্রামীন জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছে মানুষ। কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে আজ বলতে পারি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এক বাংলাদেশের নাগরিক আমরা। পদ্মাসেতুর মত মহাপ্রকল্প শেষ হয়েছে। যা দক্ষিণের মানুষের জীবনমান, অর্থনীতি সবকিছুর ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত করেছে৷ মেট্রোরেলের মতন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মত মেগা প্রজেক্টের কার্যক্রম শেষ হবার পথে। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ম্যাজিক্যাল নেতৃত্ব বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ব দরবারে এক সম্মানজনক জায়গায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার বড় ব্রতী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ৭৪ বছরে পেরিয়েও এখন যৌবনা আওয়ামী লীগ; যে দলটি সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ ও জনগণের অধিকার আদায়ে সর্বদা সোচ্চার। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশ্বাস করে বাংলাদেশের যতদিন অস্তিত্ব থাকবে শত-সহস্র বছর ধরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগও তাদের গৌরবময় যাত্রা অব্যাহত রাখবে।

আজকের ঐতিহাসিক এই দিনে আওয়ামী লীগের ৭৪ বছরকে মোটা দাগে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পুরোভাবে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। মাঝখানে ৬ বছর বাদ দিয়ে ৪২ বছর ধরে দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। পিতা ও কন্যার মধ্যে আওয়ামী লীগে কার অবদান বেশি- সেই বিচারের ভার ইতিহাসের। তবে এটুকু বলতে পারি, কঠিন চড়াই-উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে ৭৪ বছরের আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে আনতে নিঃসন্দেহে পিতা-কন্যাই সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দৃঢ়তার সঙ্গেই বলতে পারি, একে অপরের পরিপূরক। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যথার্থই বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন। আর দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।’ এটা ঠিক, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ গঠনের পর থেকেই পশ্চিমা শোষক, শাসক ও পাকিস্তান সামরিক চক্র এ দলের বিরোধিতা করে আসছে। পাকিস্তানের ২২ বছরে প্রায় ১২ বছর শেখ মুজিবকে জেলে অন্তরীণ রাখা হয়। শুধু পূর্ব বাংলার মানুষের পক্ষে ন্যায্য কথা বলার জন্য শেখ মুজিবকে দু’বার ফাঁসির মঞ্চে যেতে হয়েছে। শেখ মুজিব তাঁর কঠিন রাজনৈতিক জীবনে কোনদিন আত্মগোপনে যাননি। তিনি যে কতবার গ্রেফতার হয়েছেন, এরও সঠিক হিসাব এ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। জেলে যাওয়ার জন্য একটি ছোট্ট বেডিং সব সময়ই রেডি থাকত। জেলখানাকে বলা হতো মুজিবের দ্বিতীয় বাসভবন। বাংলা ও বাঙালির দুঃখী মানুষের নেতা শেখ মুজিবের কোন পারিবারিক জীবন ছিল না। জেল থেকে বের হয়ে নৌকায়, সাইকেলে ও হেঁটে সারা বাংলা ঘুরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন।

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের চাটুকার গভর্নর মোনায়েম খান প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমি যতদিন গভর্নর থাকব, শেখ মুজিব ততদিন সূর্যের মুখ দেখতে পারবে না।’ অর্থাৎ মুজিবকে জেলের ভেতরেই থাকতে হবে। মোনায়েম খান এমন কথাও বলেছিলেন, ‘কোন সরকারি কর্মকর্তা শেখ মুজিবের মেয়েকে বিয়ে করলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে।’ কিন্তু ফাঁসির মঞ্চে নিয়েও সাহসের বরপুত্র শেখ মুজিবকে দমাতে পারেনি। আসলে শেখ মুজিবের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কামিয়াব হন। তরুণ নেতা শেখ মুজিবসহ অন্য নেতারা পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পরেই বুঝে ফেলেন, এ অদ্ভূত আকৃতির দেশ দীর্ঘকাল টিকে থাকবে না। ১৯৪৯ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ জুন পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগের দ্বিতীয় কাউন্সিলে মুসলিম লীগের প্রথম সারির নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান পূর্ব বাংলার নেতাদের একাংশকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এই সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা ১৯৪৯-এর ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলির কেএম দাশ লেনে অবস্থিত রোজ গার্ডেন হলরুমে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে একটি সম্মেলনে মিলিত হন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সম্মেলনে কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিত থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সভায় পূর্ব বাংলায় একটি আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমএলএ) শামসুল হক ‘মূল দাবি’ নামক একটি লিখিত পুস্তিকায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ, জনগণের প্রত্যাশা ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সারা দেশ থেকে শ’তিনেক প্রতিনিধি ওই সম্মেলনে উপস্থিত হন। এই সম্মেলনেই পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করা হয়। মওলানা ভাসানীকে সভাপতি ও শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। যুবনেতা শেখ মুজিব কারাগারে থেকেই মাত্র ২৯ বছর বয়সে দলের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। কমিটির অন্য নেতারা হলেন- সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খান, সাখাওয়াত হোসেন (ঢাকা চেম্বারের প্রেসিডেন্ট), আলী আহমদ এমএলএ, অ্যাডভোকেট আলী আমজাদ খান, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম খান, ২নং যুগ্ম সম্পাদক খোন্দকার মোশতাক আহমদ, সহ-সম্পাদক এ কে এম রফিকুল হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ ইয়ার মোহাম্মদ খান।

কারাগার থেকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত শেখ মুজিব মুক্তিলাভ করেন জুলাইয়ের শেষ দিকে। জেল থেকে বের হয়ে তিনি বিরাজমান খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন। শেখ মুজিব সেপ্টেম্বরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার হয়ে কয়েকদিন পর বের হয়ে আসেন। অক্টোবরে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভায় পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনের পদত্যাগ দাবি করেন শেখ মুজিব। ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিব দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৮ বছরের মাথায় ১৯৫৫ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ কার্যকরী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া না হলে দলীয় সদস্যরা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করবেন।’ এভাবেই আওয়ামী লীগ স্বায়ত্তশাসন দাবির মাধ্যমে স্বাধীনতার সোপান তৈরি করে। গোড়া থেকেই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় যে শেখ মুজিবের ছিল, তা গণপরিষদের প্রদত্ত তাঁর বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। ২৫ আগস্ট (১৯৫৫) করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে প্রদত্ত বক্তব্যে শেখ মুজিব বলেন, ‘আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে, আপনারা পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলা নামে ডাকেন। বাংলা শব্দটার একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য। এই নাম আপনারা আমাদের জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারেন। আপনারা যদি ওই নাম পরিবর্তন করতে চান, তাহলে আমাদের বাংলায় আবার যেতে হবে এবং সেখানকার জনগণের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা নাম পরিবর্তনকে মেনে নেবে কিনা।’ এভাবে আইনসভায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের আপনারা আর পূর্ব পাকিস্তানিদের আমরা বলে উল্লেখ করে মুজিব জানান দিলেন, পাকিস্তান এক সময় দুই টুকরো হয়ে যাবে। ওই বছরই (১৯৫৫) ২১ অক্টোবর দলের বিশেষ কাউন্সিলে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাউন্সিলে শেখ মুজিব দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সভায় প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্বের বিরোধিতা করে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৭ সালের ৩০ মে শেখ মুজিব পুরো সময় দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। আওয়ামী লীগ আজকে বঙ্গবন্ধু ও দলের সেই আদর্শ থেকে দূরে সরে এসেছে। ওই সময় সিদ্ধান্ত ছিল, যিনি মন্ত্রী হবেন, তিনি দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারবেন না। ১৯৭২ সালে দলের বিশেষ কাউন্সিলে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়ে দিলে জিল্লুর রহমান সেই পদে নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে ওই পদে আসেন এএইচএম কামারুজ্জামান।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস। একটি মাত্র লেখার মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী দল সম্বন্ধে কোনোকিছুই লেখা সম্ভব নয়। আইয়ুবের সামরিক শাসনের বেড়াজালের মধ্যে ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবের বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ শেখ মুজিব সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ৬-দফা দাবি পেশ করেন বাংলার নেতা মুজিব। আওয়ামী লীগ নেতারা ৩ মাসের প্রচারণায় ছয় দফাকে জনপ্রিয় দাবিতে পরিণত করে তোলেন। এরপর আবার শুরু হলো গ্রেফতার, হয়রানি, নির্যাতন। আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বেশ কয়েকবার গ্রেফতার ও জামিনে মুক্তির পর ৬৬-এর ৮ মে রাতে মুজিব, তাজউদ্দীনসহ বড় নেতাদের গ্রেফতার করা হয় দেশরক্ষা আইনে। গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও ছয় দফার সমর্থনে স্বৈর-সামরিক শাসনের মধ্যেই ৭ জুন সফল হরতাল পালন করা হয়। এরপর মুজিবকে হত্যার জন্য নয়াষড়যন্ত্র করে আইয়ুব-মোনায়েম চক্র। ১৯৬৮-এর ৩ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হলো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ১৭ জানুয়ারি রাতে বঙ্গশার্র্দুল মুজিবকে মুক্তি দিয়ে জেলগেটে পুনরায় গ্রেফতার করে সেনানিবাসে আটক রাখা হয়। ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরু হয় ১৯ জুন। এ সময় জেলে থেকেই শেখ মুজিব বাংলার মানুষের মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হন।



গণঅভ্যুত্থানে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে মুজিবসহ ৩৪ জনকে মুক্তি দেওয়া হলো। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে ঢাকা কারাগারে গুলিতে হত্যা করে পাকি সামরিক চক্র। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ লোকের সমাবেশে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ’৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দীর স্মরণসভায় পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেন বাংলাদেশ। ১৯৬৯-এর ২৫ মার্চ আইয়ুবের বিদায়ের পর জেনারেল ইয়াহিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর বড় অর্জন বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশে পরিণত করা। ’৭০-এর ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় ১৬৯ (১৬২+৭) আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭ (১৬০+৭) আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টি পায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে ইয়াহিয়ার সামরিক চক্র। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের কামান-বন্দুকের সামনে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনসহ সারা বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক চক্র বাংলার নিরস্ত্র মানুষের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। ওই রাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করে। শত্রুর হাতে বন্দি বঙ্গবন্ধু মুজিবকেই করা হয় রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধুর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও তাজউদ্দীন আহমেদ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামদের যোগ্য পরিচালনায় ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র দশ মাসে জাতিকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য সংবিধান উপহার দেয়। সরকার অল্প সময়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্বীকৃতি আদায় করে। স্বাধীনতার শত্রুরা সাড়ে তিন বছরের মাথায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। জিয়ার সামরিক চক্র আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন করে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা তিনজনই জাতির পিতা হত্যার বিচার বন্ধ, স্থগিত ও আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করেন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের কামড়াকামড়ির মধ্যে দিল্লি প্রবাসী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ১৭ মে দেশে ফিরে তিন ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৩ মাসের মধ্যে ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর সেনাপ্রধান জিয়া উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতির গদি ছিনতাই করে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। ঘাতক সর্দার জিয়া শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে মদদ দেননি, তিনি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের দালালদের ক্ষমতায় বসান। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করেন।

আমি মনে করি, ইতিহাস একদিন বলবে; মুক্তিযোদ্ধা জিয়া প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী ছিলেন। এটা যদিও এখন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে এ বিষয়ে। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা তিনজনই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। এ তিন কুচক্রী মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা নেতৃত্বে এসে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনেন। জিয়া-এরশাদ তো স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রায় পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তরিত করেছিল। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আসলে জিয়ার বানানো পূর্ব পাকিস্তানেই ফিরে আসেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগকে ভারতীয় কংগ্রেসের ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় কংগ্রেস একাধারে ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল। কংগ্রেসের নেতৃত্বেই ভারত স্বাধীন হয়। স্বাধীনতাবিরোধী জিয়া চক্র বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মাথায় রাষ্ট্রপিতাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে। শেখ হাসিনা জনক হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৮ থেকে পর পর ৩ বার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এনেছেন। যদ্দুর জানা যায়, গণতান্ত্রিক বিশ্বে ভোটের মাধ্যমে এভাবে অন্য কোন নেতা শেখ হাসিনার মতো ৪ বার নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়নি। আজকের এই বাংলাদেশ, বর্হিবিশ্বে আমরা গর্বিত জাতিতে পরিণত হয়েছি। বিশ্বের বুকে এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি যারা বলতো, তারাই এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করায় জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশীরা এখন মর্যাদাশীল জাতিতে পরিণত হয়েছেন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই। বিশ্ব মোড়লদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অর্থনৈতিক সক্ষমতার সফলতা দেখিয়ে চলছেন নিরন্তর। আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যে দলটি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যতদিন বাংলাদেশ, ততদিনই নিরাপদ এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের সকলের উচিত শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করা। আজকের এই দিনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
পরিচালক, এফবিসিসিআই
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]