নওগাঁর মাঠজুড়ে সবুজ ডগায় গোছায় গোছায় সাদা ফুল। ওই সাদা ফুলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ। কৃষিবিদদের মতে, এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণে ও মানে উৎকৃষ্ট। ফলনও হয় বেশ ভালো। আর তাই পেঁয়াজের বীজ চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১০ হেক্টর। বছরজুড়েই পেঁয়াজের দাম বেশি। তাই অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পেঁয়াজের বীজ আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ১ মণ বা ৪০ কেজি বীজের দাম এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ বিষ হাজার টাকা। সময় ভেদে চাহিদার তুলনায় দাম আরও বেশি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন অ লে এখানকার পেঁয়াজ বীজের বেশ চাহিদা রয়েছে। আর তাই এখানকার বীজ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন নওগাঁর কৃষকরা।
ভালো লাভের সম্ভাবনার বিষয়ে জেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা জানায়, নওগাঁর মাটি খুব উর্বব হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ চাষে রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। জেলার মধ্যে মান্দা, আত্রাই, নওগাঁ সদর, বদলগাছী প্রভৃতি এলাকায় প্রচুর পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে।
পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে জেলার খেতগুলো। শেষ সময়ে এসে চাষিরাও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঝড়, শীলা বৃষ্টি না হলে এবার পেঁয়াজ বীজের আশাতীত ফলন হবে।
নওগাঁ জেলায় মূলত দুই জাতের বীজ চাষ হয়- তাহেরপুরী ও ফরিদপুরী। তবে তাহেরপুরী জাতের চাষ বেশি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিরূপ আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় মাঠে মাঠে পেঁয়াজ গাছে ফুলের অবস্থা খুবই ভালো। চাষিরা কয়েক সপ্তাহ পরেই মাঠ থেকে পুরোপুরি পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহ শুরু করবেন।
হেক্টর প্রতি ৬৮০ কেজি করে বীজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজার দর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এসব পেঁয়াজ বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজন ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে মণ বা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান।
মান্দার চকুলি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, পেঁয়াজের দানা উৎপাদন অতি লাভজনক হলেও ঝুঁকিও রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন ভালো, আর বিরূপ হলেই মাথায় হাত পড়ে। এবার ৩০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করেছি। উৎপাদিত এ বীজে নিজেই পেঁয়াজ রোপণ করবো বাকিটা বাইরে বিক্রি করে দিবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন,অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেয়াজ বীজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক। জেলায় এবার লক্ষমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি পেয়াজ বীজ চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৬৮০ কেজির বেশি ফলনের আশা করছি আমরা। একজন কৃষক প্রতি হেক্টর জমি থেকে পেয়াজ বীজ চাষ করে তাই ২০ থেকে ২১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন।