‘আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। স্মৃতিবিজড়িত এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জববার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের।’
মায়ের ভাষাকে নিয়ে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের আবেগ, উচ্ছাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসার কোনো অংশেই কম নয়। মহান ভাষার মাসে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন তিতুমীর কলেজ সংবাদদাতা সিয়াম মাহমুদ।
গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী চেতনার উৎস একুশে ফেব্রুয়ারি
মায়ের ভাষা মাতৃভাষা। বাঙালি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্তে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা যে ভাষাকে রক্ষার জন্য শত শত তরুণ জীবন দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষা নিজের সংস্কৃতি এবং কৃষ্টিকে রক্ষায় রক্ত ঝরতেও পিছুপা হয় না, সেই ভাষার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তবে অপসংস্কৃতির ব্যাপকতায় বর্তমান যুগে মাতৃভাষার উপর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ভাষার প্রভাব সর্বদাই লক্ষ্য করা যায়।কিন্তু মাতৃভাষাকে বিকৃত করে অন্য ভাষা থেকে ধার করা শব্দের সংযোজন কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিজের মাতৃভাষাকে ভালো না বাসলে অন্য ভাষা আয়ত্ত করা যায় না।
তাই সমাজে মাতৃভাষার অপসংস্কৃতি বিকৃত ভাষার অনুপ্রবেশ সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনে,যা নতুন প্রজন্মের সংস্কৃতির ধারনার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
২১আমাদের চাঞ্চল্য উদ্দীপনা। কাব্য, গল্প,কবিতা,উপন্যাস রচিত মাধ্যমে ২১ এর ভাষা রক্ষার সত্যিকার ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাভাষা বিকাশে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
নৌরিন জাহান প্রিয়া
শিক্ষার্থী, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ,
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
ভিন দেশি সংস্কৃতির ভিরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ভাষার সৌন্দর্য্য
ভাষা প্রত্যেকে জাতির একটা নিজস্ব প্রতীক। আমরা এক গৌরবময় জাতি বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। পৃথিবীর প্রায় ৭১১১টি ভাষা থাকলেও আমাদের বাংলা ভাষা তারমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ভাষা কারণ এই ভাষায় জন্য হাসতে হাসতে প্রান দিয়েছে আমাদের দামাল ছেলেরা। যা পৃথিবীতে বিরল মাতৃভাষার জন্য প্রান দেওয়া। সালাম, জাব্বার রফিক, বরকত এর রক্তের মিশে থাকা ভাষা হলো আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা ভাষায় প্রায় ২৮ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ কথা বলে তারমধ্যে প্রায় ১৯/২০ কোটি মানুষ বাংলাদেশি। কিন্তু আজ অপসংস্কৃতি/ভিন দেশি সংস্কৃতির ভিরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ভাষার সৌন্দর্য্য। এতো ত্যাগ তিতিক্ষার ভাষার মাধুর্য হারিয়ে যাচ্ছে যত্রতত্র তার অপব্যবহারে। যে মুখ দিয়ে বের হবার কথা আমাদের মধুময় সুন্দর মাতৃভাষা সেখান দিয়ে বের হয় তার বিকৃত রুপ। যা সৌর্ন্দয্য নষ্ট করে দে ভাষার আঘাত হানে শহীদের রক্তে। অনেকক্ষেত্রে আমরা মাতৃভাষা ভুলে ব্যবহার করতে শুরু করি ভিন্ন ভাষা। আমাদের উচিত শুধু মাতৃভাষা দিবসে নয় প্রত্যেকটা দিন ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার করা এবং ভিন দেশী ভাষা ত্যাগ করে নিজের ভাষাকে ভালোবাসা এবং ব্যবহার করা।
মমিনুর রশিদ
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ,
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
মাতৃভাষার সংস্কৃতি তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। ১৯৫২ সালের এ মাসে সারা দেশের ছাত্র সমাজ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের এই বাংলা ভাষা রক্ষা করেছে। বাংলা ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা এ ভাষা আমাদের সারা বিশ্বে নতুন করে পরিচিতি হাওয়ার স্বীকৃতি দান করেছে। আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিলো পাকিস্তানি হায়নার দলেরা। তারা চেয়েছিলো উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু বাঙালি জাতি আমাদের মায়ের ভাষা রক্ষা করার জন্য তারা জীবন দিয়েছে। এদিনটি আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সহ সমস্ত আন্দোলনের বাঙালী জাতিকে ত্যাগী করে তুলেছে।
ভাষা ছাড়া আমাদের জ্ঞান চর্চা বিকশিত হয় না। এবং মাতৃভাষা চর্চায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার পুরোপুরি হচ্ছে না।আমাদের সকলের উচিত বাংলা ভাষার সঠিক মর্যাদা দেওয়া।বাংলা ভাষা বিশ্বজুড়ে একটি স্বীকৃত ভাষা। এই স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর।
আমাদের মাতৃভাষার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের দেশে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে যেনো বাংলা ভাষার কদর করা হয় এ মাসে শুধু বাংলা ভাষার উপর বিভিন্ন মিডিয়ায় লেখালেখি হয় টকশো হয়। আমাদের উচিত সব সময় বাংলা ভাষার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলা যেনো বাংলা ভাষার কোনো মানহানি না হয়।
কারণ এ ভাষা রক্ষা করার জন্য আমাদের দেশের তরুণ ছাত্র সমাজের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিলো।এ ভাষার জন্য আমরা দিনের পর দিন যুদ্ধ করে আমাদের এই মাতৃভাষা কে বাংলার বুকে টিকিয়ে রেখেছি। এবং আমরা এই পবিত্র বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি।অন্যায়, অপকর্ম, অপসংস্কৃতি, অপশক্তির, বিরুদ্ধে মাতৃভাষায় কথা বলার মাধ্যমে আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি।
আজাদ হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিভাগ,
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
বাংলা ভাষায় জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু
১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অনেকেই অবদান রেখেছেন। কেউ জীবন দিয়ে, কেউবা আহত হয়ে, কেউ কেউ আবার বেচে থেকে লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন বাংলা ভাষার জন্য। ভাষা আন্দোলনে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ অবদান রয়েছে। যেটা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বঙ্গবন্ধুর অবদানের সত্যতা প্রমাণিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের একচ্ছত্র অধিপতি হন। এ সময় নবগঠিত দুটি প্রদেশের মধ্যে পূর্ব বাংলার প্রতি তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ভাষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করলেন। ফলে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলে পূর্ব পাকিস্তানের পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণে সমবেত হয়েছিলেন কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী। সেখানে পাকিস্তানে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ভাষা বিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। আর সেই গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করেছিলেন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।’
১১ মার্চের গ্রেপ্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের এক টার্নিং পয়েন্ট। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু হলে সেই আন্দোলনেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলা ভাষা এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর এই অবদান চিরস্মরণীয়।