বরগুনার বেতাগীতে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ভুয়া ঠিকানা প্রদানকারী এক প্রার্থীকে চাকুরিতে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ঘোষনা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকুরি ঠেকাতে ঐ প্রার্থী এখন নতুন ঠিকানায় ঘর নির্মাণ করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় ও আলোচনার ঝড় উঠছে। ইতোমধ্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক ও বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একাধিক প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, পরিবার কল্যান সহকারী পদে গত বছরের ১২ আগস্টে বরগুনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের (স্মারক নং- জে.প:প:/বরগুনা/জনবল নিয়োগ/২০২১/২১৬) পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে আবেদনকারীকে অবশ্যই শূন্য পদের বিপরীতে প্রদর্শিত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ইউনিট/ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। কিন্তু উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের পশ্চিম কাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হালিম মৃধার মেয়ে মোসা. খাদিজা আক্তার পরিবার কল্যান সহকারী পদে তার প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে বিভাজিত ঐ ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে চাকুরের আবেদন করেন।
একই পদে ২/ক ইউনিটের প্রকৃত বাসিন্দা মোসা. আসমা আক্তার (রোল নং-১২০২৭০৫৫১), মোসা. সুইটি আক্তার (রোল নং-১২০২৭০৫৭৮) ও মোসা. মুক্তা আক্তারসহ (রোল নং-১২০২৭০৫৮১) মোট ৬ জন পরিবার কল্যান সহকারী পদে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু গত ৯ নভেম্বর বরগুনা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরিবার কল্যান সহকারী পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হিসেবে বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে মোসা. খাদিজা আক্তারের রোল (১২০২৭০৫৮০) প্রকাশ করা হয়।
মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী আব্দুল সত্তার হাওলাদারের মোসা. সুইটি আকতার অভিযোগ করেন, প্রকৃত বাসিন্দা হিসেবে আমাদের চাকুরে না দিয়ে যিনি ইউনিটের বাসিন্দা নয় তাকে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে চাকুরিতে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ঘোষনা করা হয়েছে। খাদিজা আক্তার ৪ নং ওয়ার্ড তথা ২/খ ইউনিটের বাসিন্দা। এখন সে তার চাকরি স্থায়ী করতে ২/ক ইউনিটে নানার জায়গায় ঘর নির্মাণ করছে। আমাদের দাবি আমারা যারা প্রাপ্য তাঁদের যেন চাকরি হয়।
মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী আরেক অভিযোগকারী মো: জাবেদ আলী খলিফার মেয়ে মোসা: আসমা আক্তার ও গাজী হাবিবুর রহমানের মেয়ে মোসা: মুক্তা আক্তার বলেন, ‘আমরা যোগ্য প্রার্থী হওয়া সত্বেও আমাদের সকলকে বি ত করে সম্পূর্ণ অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অন্য ইউনিটের বাসিন্দাকে কি ভাবে চকুরিতে চূড়ান্ত করা হলো তা বোধগম্য নয়। আমরা এর প্রতিকার চাই।
সরেজমিনে গিয়ে বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে গিয়ে খাদিজা আক্তারের স্থায়ী কোন বসত ভিটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঐ এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ির পাশে কয়েকজন মিস্ত্রিকে একটি ঘর নির্মাণ করতে দেখা যায়। বাড়ি লাগোয়া আমন চাষের আবাদী জমির ধানক্ষেতের উপর পুরনো টিন ও কাঠ দিয়ে এ ঘর উত্তোলন করা হচ্ছে। সেখানে মিস্ত্রী মো: সোহেল মিয়া ও তাঁর হেলপাররা তড়িগড়ি করে কাজ করছেন। লোকজন দেখে ্ বয়স্ক একজন দুরে সরে যায়। আর অন্যজন পুরানো কাঠে পেরেক পুতছেন। সেখানে খাদিজা আক্তারের পরিবারের কাউকে না পাওয়ায় কাজে এত তড়িগড়ি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কাঠ মিস্ত্রী মো: সোহেল মিয়া বলেন, ‘মালিক যে ভাবে বলেছে সে ভাবেই করছি। তবে এর কারণ কি বলতে পারিনা।’ স্থানীয় ইউনুচ হাওলাদার জানান, চাকুরি ঠেকাতে বৈধতা আদায়ের জন্য যে জায়গায় ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা খাদিজার নানামৃত আনোয়ার আলীর জমি। তাঁর নামে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর তাঁরা এই ঘর নির্মাণ শুরু করে।
ক্ষুব্ধ ও বি তরা গত ০৫-১১-২০২২ খ্রি: বরগুনা জেলা প্রশাসক ও নিয়োগ কমিটির সভাপতির নির্দেশ মোতাবেক বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক আবেদনকারী খাদিজা আক্তারের স্থায়ী ঠিকানা সঠিক নয় বলে অর্থাৎ বিজ্ঞাপিত শূণ্য ইউনিটের বাহিরের বিষয়টি ১০০% সঠিক মর্মে গত ৬-১১-২০২২ খ্রি: জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত ২০-১১-২০২২ খ্রি: পরিবার পরিকল্পনা বরগুনার উপ-পরিচালক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবের নির্দেশে গত ২৪-১১-২০২২ খ্রি: পুন:তদন্ত করা হয় সেখানেও চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীর আবেদনে প্রদর্শিত স্থায়ী ঠিকানা সঠিক নয় এবং বিজ্ঞাপিত শূণ্য ইউনিটের বাহিরে আগের তদন্তের একই চিত্র প্রতিফলিত হয়। এতেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় গত ২২-১১-২০২২ খ্রি: পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক নিকট তাঁদের পক্ষ থেকে পুন:রায় লিখিত আভিযোগ করা হয়।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, প্রকৃত পক্ষে খাদিজা আক্তারের বাবার স্থায়ী ঠিকানা ২/খ ইউনিট, গ্রাম: পশ্চিম কাউনিয়া ও ডাকঘর কাউনিয়া হাঁট। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানেও বসবাস করছেন না। বাবা মো: হালিম মৃধা পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন বরগুনা পুলিশ লাইন এলাকায় আর খাদিজা আক্তারের স্বামীর বাড়িও বরগুনায়।
এনিয়ে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ চাকুরে প্রার্থী মোসা. খাদিজা আক্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার মা নুরুন নাহার বলেন, আমরা ৪নং ওয়ার্ডের ভোটার। তবে ৬নং ওয়ার্ডে আমার বাবার বাড়িতে জমিজমা নিয়ে ঝামেলা থাকার কারণে সেখানে এখন ঘর নির্মাণ করিতেছি। খাদিজা এখন নানা বাড়িতেই থাকে। তবে সেখানেও খাদিজাক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম রব শুক্কুর মীর জানান, খাদিজা আক্তার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁরা সেইভাবে আমার কাছ থেকে পরিচয়পত্র ও প্রত্যয়নও নিয়েছে। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়োগটি ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের অংশে। এই অংশের যারা প্রার্থী তাঁরা আপত্তি তুলে সংশ্লিস্টদের কাছে অভিযোগ করায় খাদিজা আমার কাছে আবার ৬নং ওয়ার্ডের প্রত্যয়ন নিতে এসেছিল। কিন্তু আমি তাঁকে প্রত্যয়ন দেইনি। না বলে দিয়েছি। কারণ আইনগতভাবে তাঁকে সেখানকার প্রত্যয়ন দেওয়ার কোন সূযোগ নেই।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকুরি নেওয়ার কোন সূযোগ নেই। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তের দায়িত্বে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সরজমিনে তদন্ত শেষে ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত রিপোর্টে যেহেতু এর সত্যতা পাওয়া গেছে। অবশ্যই তাঁর নিয়োগ বাতিলের বিধান রয়েছে।
নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা বরগুনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হক আজাদ বলেন, এটা নিয়ে উৎকন্ঠার কিছু নেই। আমরা ডিসি স্যারের সাথে পরামর্শ করে পদক্ষেপ নিবো।
নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে যেহেতু নিয়োগ প্রদানকারী কর্মকর্তা আমি নই তাই এ বিষয়ে আমাদের কোন পদক্ষেপ নেই।