
মহামান্য হাইকোর্টে সামিয়া রহমানের আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে তার পদ ফিরিয়ে দিয়ে প্রাপ্য ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
কিন্তু এই আদালতের এ রায়ের পর ৮ আগস্ট সামিয়া রহমানের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সামিয়া রহমানের কাছে ই-মেইলে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে দাবি করা হয়, সামিয়া রহমানের কাছে ঢাবি সাড়ে ১১ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তবে সেই চিঠিটিতে ৩ আগস্টে তৈরি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ৩ আগস্ট প্রস্তুতকৃত চিঠি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সামিয়া রহমানের কাছে ৬ দিন পর ইমেইল করতে হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি যেদিন রায়ে হেরে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেদিনই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেও একই চিঠি পাঠানো হয়। যদিও চিঠিতে তারিখ হিসাবে ৩ আগস্ট লেখা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই একটি চিঠি কিভাবে এতদিন পর পৌঁছায় তা নিয়েও কথা উঠেছে।
এদিকে, সামিয়া রহমান বিষয়টি নিয়ে তার লিখিত বক্তব্যে ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকের হোয়াটআ্যপে জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে সন্তানের অসুস্থতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হালের এই প্রশাসনের লিখিত অনুমতি নিয়েই ৩১ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত আমি অর্জিত ছুটিতে ছিলাম। সন্তানের সুস্থতার জন্য তার পাশে এ মুহূর্তে আমার থাকা আমার জীবনের চেয়েও প্রয়োজন ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম যেন মানবতার খাতিরে হলেও তারা আমাকে বিনা বেতনে আরও কিছুদিন ছুটি দেন। অবশ্য এই প্রশাসনের কাছে মানবতা বিষয়টি নেহায়েতই অসম্ভব, বিশেষ করে আমি সামিয়া রহমানের ক্ষেত্রে। তাই যথারীতি তারা ৩১ মার্চের পর আর ছুটি মঞ্জুর করেননি। যেহেতু ৩১ মার্চ, ২০২২ আমার অর্জিত ছুটির অনুমতি শেষ, তাই লিখিত চিঠি দিয়ে ১ এপ্রিল, ২০২২ থেকে বাধ্য হয়েই আমি আর্লি রিটায়ারমেন্ট চাই। রিটায়ারমেন্ট আমি চেয়েছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। তাই যখন আমি চাইব পদত্যাগ করতে, তখন থেকে তারা সেটি কার্যকর করবেন। কারণ চাকরি ছাড়ার অধিকার সবার আছে। আর চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে আমি কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করিনি। সন্তানের পাশে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে চেয়েছি আর্লি রিটায়ারমেন্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার কোনো দেনা নেই। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার পাওনা আছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, ৪ আগস্ট মামলায় হেরে বর্তমান প্রশাসন ৮ আগস্ট আমার কাছে টাকা দাবি করে একটা ইমেইল পাঠায়। যে ইমেইল ৮ আগস্ট পাঠানো কিন্তু এর ভিতরে ব্যাক ডেটে হাতে লেখা ‘৩ আগস্ট’। মামলায় হেরে গিয়ে কি এখন এই প্রতিহিংসা?
উল্লেখ্য, গবেষণা নিবন্ধে ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সামিয়া রহমান হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুলে সামিয়া রহমানকে তার যথাযথ পদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
মূলত, আদালত থেকে সামিয়া রহমানকে তার যথাযথ পদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির কালো অধ্যায়ে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক মিলেই আবারো ষড়যন্ত্র শুরু করেছে নতুন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রোভিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের পাতাকে বলেন, আদালতের রায়ের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিকে কুলষিত করছেন যারা তাদের মধ্যে একজন নারী প্রভাবশালী শিক্ষকের (যিনি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে হেরেছেন) পরামর্শেই আবারো সামিয়া রহমানকে চাপে রাখতে এ ধরণের চিঠি ইস্যু করিয়েছেন। প্রোভিসি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমই এখন অনলাইনে হয়। ৩ আগস্ট চিঠি প্রস্তুত হলে ৮ আগস্ট কেন সামিয়া রহমানকে পাঠাতে হবে? এই ছয়দিন কি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল? ৩ আগস্টের চিঠি কেন ৮ আগস্ট পাঠানো হলো, এ নিয়ে তদন্ত করলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে। দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গৌরব ও সম্মান রয়েছে, দিন দিন শিক্ষক রাজনীতির কালো দিকগুলোর কারণে তা ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে কয়েকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।