ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন আয়োজনের কথা ইতোমধ্যেই বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানা হিসাব-নিকাশ। এই হিসাব-নিকাশে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলছে কানাঘুষা। কেউ বলছেন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে, কেউ বলছেন তারা এককভাবেই এগোবে। তবে গত কয়েক দিনে দলের ভেতরে ব্যাপক গুঞ্জন- এবার বিএনপির সঙ্গে জোট করতে পারে জাপা। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নানা কথাবার্তায় এমন মনোভাবই নাকি প্রকাশ পেয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে মিলে আগামী নির্বাচন করতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। তবে দলটির সিনিয়র নেতারা এ ব্যাপারে তাকে খুব একটা সমর্থন করছেন না বলে জানা গেছে। জিএম কাদের দিনকয়েক আগে গণমাধ্যমে জাপার সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক মিল থাকার কথা বললেও দলের একাধিক নেতা বিষয়টির সঙ্গে একমত নন। তাদের ভাষ্য, যে বিএনপি দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে জেল খাটিয়েছে, জেলের মধ্যে নির্যাতন করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো নির্বাচনী জোট হতে পারে না।
সূত্র জানায়, গত ২২ মে নিয়মিত চেকআপের কথা বলে সিঙ্গাপুর যান জিএম কাদের। সেখানে দায়সারা দেখা করেন প্রয়াত এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে। এর বাইরে তিনি বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন- এমন গুঞ্জনও ওঠে। সেই বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে জোট করার কথা বলেন। দেশে ফিরে কয়েকজন কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথাও বলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে একাধিক নেতা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, জাতীয় পার্টি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপির দ্বারাই। এছাড়া তারা দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে অন্যায়ভাবে জেলে রেখে নির্যাতন করেছে। যা তিনি নিজেই মিডিয়ার সামনে নানা সময় বলে গেছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বলে আসছেন, তারা আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে নেই। তবে মহাজোটের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি কোনো পক্ষ থেকেই। জি এম কাদের নিজেও বিভিন্ন সভা সমাবেশে এমন বক্তব্যই রেখে আসছেন। সম্প্রতি তিনি সরকারের সমালোচনা করেও বক্তব্য দিচ্ছেন। সরকারকে কর্তৃত্ববাদী আখ্যা দিয়ে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, দলের কেউ 'সরকারের দালালি' করলে পস্তাতে হবে।
জাপার নেতা-কর্মীদের অবশ্য অভিমত, ‘গৃহপালিত বিরোধী দল' হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাতীয় পার্টি প্রধানের মুখ থেকে এমন সব বক্তব্য ভিন্ন ইঙ্গিত দেয়। জি এম কাদের মহাজোট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়তে চান বলেই এমন বক্তব্য রাখছেন। গত রমজানে জাপা আয়োজিত ইফতারে দলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোও ছিল সেই কৌশলেরই অংশ। যদিও বিএনপি শেষ পর্যন্ত সেই ইফতারে অংশ নেয়নি।
সূত্র বলছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জি এম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে তারা বিভিন্ন স্থানে সবার অগোচরেই বৈঠক করেছেন। ফোনালাপ চলছে নিয়মিতই। দলীয় ফোরামেও অনেকের সঙ্গে জি এম কাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামার প্রত্যয় জানিয়েছেন। সবকিছুর মধ্যেই জি এম কাদেরের বিএনপিমুখী প্রবণতা দেখতে পাচ্ছেন এসব সূত্র।
দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, রাজনীতির মাঠ জমে ওঠেনি। তবে নির্বাচন সামনে রেখে শিগগিরই রাজনীতির মাঠ জমে উঠবে। এখনো সুস্পষ্ট না হলেও জাপা চেয়ারম্যানের গতিবিধি বিএনপির দিকে। আমাদের দল বিএনপিমুখী হলেও কতটা সফলতা আসবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি বলছেন, রাজনীতির খেলায় জি এম কাদের কতটুকু সফল হবেন, তা বোঝা মুশকিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ভোরের পাতাকে বলেন, 'নির্বাচনের এখনো অনেক দিন বাকি। এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটতে পারে। তবে আমরা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করতে চাই।'
বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটের প্রশ্নে নেতিবাচক উত্তর দেন মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, “বিএনপির কাছে কেন যাব? কোনোদিনই যাব না। আমাদের কাছে অন্যদের আসতে হবে। প্রয়োজনে বিএনপি আসবেআমাদের কাছে।' বিএনপি এলে কি জোট হবে- এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান তিনি।
বিএনপির সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে জিএম কাদেরের কাছে জানতে চাইলে ভোরের পাতাকে তিনি বলেন, 'এখনো অনেক সময় বাকি আছে। এ বিষয় চিন্তা করার সময় এখনো আসেনি। বিএনপির তরফ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা এখনো চূড়ান্ত কিছু ভাবিনি। সময় হলে আমরাই গণমাধ্যমকে জানাব।’