
ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী পেয়ারার ভাসমান বাজার সদর উপজেলার ভীমরুলী ও ডুমুরিয়া এবং পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানায়। পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়ে জমে উঠছে এ সকল পেয়ারার বাজার।
এদিকে মৌসুমের শুরুতেই ঝালকাঠির ভাসমান পেয়ারা বাজারের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে অসংখ্য পর্যটক ভীড় জমাতে শুরু করেছেন। পদ্মা সেতুর বদৌলাতে সহজ হয়েছে পেয়ারা বাজারের ভ্রমণ। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় ভাসমান পেয়ারা বাজারের নান্দনিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ সবাই। তরুন তরুনীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে এ অ ল। পরিণত হয়েছে অঘোষিত পিকনিক স্পট।
প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ভীমরুলি, ডুমুরিয়া, আটঘর- কুড়িয়ানার খালে শত শত ভাসমান নৌকা ও টলারের উপর ব্যতিক্রমধর্মী ভাসমান হাট বসে। হাজার হাজার মণ পেয়ারা দেশের রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগে এখান থেকে পেয়ারা সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন নৌপথে শত শত ইঞ্জিনচালিত টলার ও সড়ক পথে বিলাসবহুল গাড়ী ভরে পর্যটক আসে পেয়ারার বাগান ও ভাসমান হাট দেখার জন্যে।
দেশের দক্ষিনা লের জেলা ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের কৃষকদের একটি বড় অংশ পুষ্টিগুন সম্পন্ন আপেল খ্যাত পেয়ারা চাষের সাথে জড়িত। এ এলাকার চাষীরা বংশ পরম্পরায় প্রায় ২শ বছর ধরে পেয়ারা চাষ কর আসছে। পেয়ারা চাষ করে অনেকে বিত্তশালী ও অর্থের মালিকও হয়েছেন। জলের ওপর ভাসমান বাজারে জমজমাট ব্যবসা চলে ঝালকাঠি জেলার কীর্তিপাশা, ভীমরুলি, শতদশকাঠি, বাউকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুরকাঠি, সাওরাকাঠি, পোষন্ডা, হিমানন্দকাঠি, রমজানকাঠি, জগদীশপুর, শিমুলেশ্বর, রামপুর, কাঁচাবালিয়াসহ ১৩টি গ্রামের ৩৫০ হেক্টর জমিতে এবং পিরোজপুরের নেছারাবাদের আটঘর কুড়িয়ানা, আদমকাঠি, বংকুরা, মাহমুদকাঠি, আদা বাড়িসহ ২৬ টি গ্রামে ৬৪৫ হেক্টর জমিতে। বানাড়ীপাড়া উপজেলার নরেরকাঠি, আলতা, গাভাসহ ১২ টি গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। হেক্টর প্রতি প্রায় ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন হয়। তবে স্থানভেদে কমবেশি হতে পারে। এ অ লের প্রায় ৫১ টি গ্রামে দেশীয় পেয়ারা চাষ করা হয়। সহ¯্রাধিক পরিবার পেয়ারা চাষের ওপর নির্ভরশীল । তবে পেয়ারা সংক্ষণের জন্যে কোন হিমাগারের ব্যবস্থা নেই। পেয়ারার জীবনকাল সীমিত ও কম স্থায়িত্ব বিধায় এটি দ্রুত পঁচনশীল।
এ সকল বিষয় বিবেচনা করে ৫ আগষ্ট ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পেয়ারা বাগান ও ভাসমান বাজারে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পেয়ারা মৌসুম উপলক্ষে ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া, ভমিরুলিসহ অন্যান্য বাজার ও খালসমূহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ আগষ্ট সন্ধ্যা ৭টায় ভীমরুলী হরিসভা চত্বরে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথী ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: জোহর আলী।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ঝালকাঠি সদর উপজেলার রমজানকাঠি কারিগরি ও কৃষি কলেজের অধ্যক্ষ পীযূষ কান্তি মন্ডল জানান, “দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নদী পথে টলারে ও গাড়ীতে ভীমরুলিতে পর্যটক এসে ভীড় জমাচ্ছে। তারা পেয়ারা বাগান ও বাজার ঘুরে ঘুরে দেখে তৃপ্তি পাচ্ছে। অনেকে গাছ থেকে তাঁজা পেয়ারা নিজ হাতে পেড়ে খাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বাগানের ফ্রেশ পেয়ারা, আমড়া ও লেবু কিনে বাড়িতে প্রিয়জনদের জন্যে নিয়ে যাচ্ছে। গান বাজনা করে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা যায় তরুন তরুনীদের। মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে ভীমরুলীর ভাসমান পেয়ারার বাজার। প্রতিদিনই উপচেপড়া ভীড় জমাচ্ছে পর্যটকরা। তবে পর্যটকদের জন্যে বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধার ব্যাবস্থা করা হয় নাই।”
পর্য়টকদের অভিযোগ বিশুদ্ধ পানীয় জলের তেমন কোন সুব্যবস্থা নেই। ঘোরাঘুরির জন্যে নৌকা, স্পীডবোট ও ট্রলার পর্যাপ্ত না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করতে দেখা যায় আগত পর্যটকদের।