
বিদেশি ঋণে জর্জরিত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা নজিরবিহীন সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বেহাল এই অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর চেষ্টায় দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বৃহস্পতিবার আরেক দফা পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি করেছে।
দেশটিতে এখন প্রতি লিটার পেট্র্রল ২৩৪, ডিজেল ২৬৩ আর কেরোসিন ২১২ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানি রুপির দরে একের পর এক পতন ঘটেছে। একই দিনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানি ২০৭ রুপির বিনিময়ে মিলছে ১ ডলার। ১৯৪৭ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানি রুপির এমন পতন কখনই দেখেনি। এমন পরিস্থিতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার পথে রয়েছে পাকিস্তান।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান বলেছেন, পাকিস্তান যদি বর্তমান অর্থনৈতিক নীতিতে চলতে থাকে, তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে আর দেরী নেই। বুধবার রাওয়ালপিণ্ডিতে পিটিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি।
ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের রপ্তানি আজ ১০ শতাংশ কমে গেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বেরিয়ে গেছে ৭০০ বিলিয়ন রুপি। পাকিস্তানের অর্থনীতি সম্পর্কে রেটিংও কমিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান মুডিস। তিনি বলেন, দেশ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির পথে রয়েছে। এই দেশকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় আগাম ও স্বচ্ছ নির্বাচন।
পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের তীব্র ভর্ৎসনা করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাসীনরা পাঞ্জাবের ২০টি আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সহায়তা চায়। দেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হতে পারে না।
পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি যখেই লংমার্চের ডাক দেব, তখনই আপনাদের পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে হবে। পিটিআইয়ের লং মার্চের সময় লোকজনকে লক্ষ্য করে অপরাধী, সন্ত্রাসীদের মতো গুলি করা হয়েছিল এবং আমরা ইসলামাবাদে অধিকৃত-কাশ্মিরের মতো নৃশংস দৃশ্য দেখেছি।
ইমরান খান বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার অনুমতি দেননি। যারা সঠিক পথে আছেন আপনাকে তাদের পাশে অথবা অন্য পক্ষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
এর আগে, সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল পাঞ্জাব প্রদেশ একেবারে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হামজা শেহবাজের সমালোচনা করে ইমরান খান বলেন, পাঞ্জাবে ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে হামজা শেহবাজ অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
পিটিআইয়ের এই চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছে। কৃষকের ফসল হুমকিতে রয়েছে। কিন্তু মাফিয়ারা সর্বত্রই সরকারের রিটকে চ্যালেঞ্জ করছে এবং ক্ষমতাসীনরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।