প্রকাশ: শনিবার, ১১ জুন, ২০২২, ৭:২৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর ও মনু রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী চককবিরাজ পাহাড়ী এলাকায় সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে। এঘটনার ৪ ঘন্টা পর পর সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট কাজ করে প্রায় ২ ঘন্টা পর পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার(১১জুন) বেলা পৌণে ১টায় ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এসময় প্রায় ৪ ঘন্টা সিলেটের সাথে সাড়া দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উভয় কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করে। কিছুক্ষণ পর থেকেই ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে আগুনের সূত্রপাত দেখা যায়। পরবর্তীতে তেলের ট্রাংকি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ৪ কি.মি. অতিক্রম করার পর যাত্রীদের হাল্লা চিৎকারে ট্রেনটি থামানো হয় চককবিরাজ এলাকায়। তখন যাত্রীরা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্থানীয় লোক ও যাত্রীদের সহযোগিতায় ট্রেনের কর্তৃপক্ষ আগুন লাগা তিনটি বগি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ট্রেনের জেনারেটর বগি ও পার্শ্ববর্তী যাত্রীবাহী দু’টি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনার প্রায় ১ ঘন্টা পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কমলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পরে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল থেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের মোট ৭টি অগ্নিনির্বাপক দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশা পাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ফাইটার ইফনিট আগুন নেভাতে কাজ করে।
এঘটনায় ট্রেনের ১৬ টি বগির মধ্যে তিনটি বগি ব্যতীত কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় ট্রেনের যাত্রীরা নিজ নিজ খরচে সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এসময় জেলা প্রশাসক স্থানীয় লোকদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আব্দুল হককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে এ তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মোঃ ইসমাইল বলেন, ট্রেনের পাওয়ার কার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ট্রেন থামানোর পর দেখা যায় চাকার মধ্যে আগুন ও পরে পাওয়ার কারের ভেতর তেলের ট্রাংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকেও ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠনন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার মোঃ জামাল উদ্দীন বলেন, ট্রেনটি বারোটা পয়তাল্লিশ মিনিটে শমশেরনগর স্টেশন ছেড়ে যায়। এঘটনার পর থেকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লংলা স্টেশনে ও চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীমঙ্গলে আটকা পড়ে। তবে আগুন পুরোদমে নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিকেল পৌনে ৫ টায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন মৌলভীবাজারের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কি কারণে আগুন লাগে তা এখনো জানা যায়নি।