ড. কাজী এরতেজা হাসান

তিনি মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক, কলাম লেখক নানা পরিচয়ে পাঠকের কাছে পরিচিত। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এর রচয়িতা। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার উলানিয়া গ্রামে। তার মায়ের নাম জোহরা খাতুন। বাবা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী। বাবা ছিলেন রাজনীতি সচেতন এবং ব্রিটিশশাসিত ভারতের কংগ্রেস নেতা।
ওয়াহেদ চৌধুরী বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সদস্য ছিলেন অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির। ১৯৪২ সালের আগস্টে আন্দোলনের সময় তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। তদানীন্তন কংগ্রেস নেতা, মতিলাল নেহরুর সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন ওয়াহেদ চৌধুরী। গাফফার চৌধুরী ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন। ১৯৪৬ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর তাকে চলে আসতে হয় বরিশাল শহরে। ভর্তি হন আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে। সে সময়ে আর্থিক অনটনের শিকার হয়ে উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। এরপর তিনি সাংবাদিকতা করেছেন ঢাকার বিভিন্ন কাগজে।
১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। এ সময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা ‘মেঘনা’র সম্পাদক হন। ১৯৫৮ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুকের’ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু কিছু দিন পর সামরিক শাসন চালু হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি মওলানা আকরম খাঁর ‘দৈনিক আজাদ’-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। এ সময়ে তিনি মাসিক ‘মোহাম্মদীর’ও স্বল্পকালীন সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক ‘জেহাদ’-এ বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং অণুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দু’বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে ‘দৈনিক আওয়াজ’ বের করেন। সেটি বছর দুয়েক চলেছিল। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি ‘দৈনিক আজাদ’-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে সহিংস বিবাদ শুরু হলে তিনি আবার যোগ দেন ‘দৈনিক ইত্তেফাকে’। ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারি ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়া মারা গেলে তিনি আগস্ট মাসে হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক ‘পূর্বদেশ’-এ যোগ দেন। একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি ‘জয় বাংলা’, ‘যুগান্তর’ ও ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় কাজ করেছিলেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর তার লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি তাকে খ্যাতি এনে দেয়। প্রথমে তিনি নিজেই গানটিতে সুর করেছিলেন। পরে শহীদ আলতাফ মাহমুদ এ গানে সুরারোপ করেন এবং এ সুরেই এখন গানটি গাওয়া হয়। বিবিসি বাংলা বিভাগের দর্শকদের জরিপে এই গান বাংলা গানের ইতিহাসে তৃতীয় সেরা গানের মর্যাদা পেয়েছে। স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। সেখানে ‘নতুন দিন’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। প্রায় ৩৫টি বই লিখেছেন তিনি। গাফফার চৌধুরী বিদেশে অবস্থান করলেও দেশের জন্য তার টান ছিল অনেক। তিনি নিয়মিত কলাম লিখছেন ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন দৈনিকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ওপর গাফফার চৌধুরী একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন, ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’। বঙ্গবন্ধুর ওপরেই আরেকটি চলচ্চিত্র, ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিকস’ প্রযোজনা করেছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতির জন্য জীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন গাফফার চৌধুরী। উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীনতা পদক (২০০৯)। প্রায় এক দশক আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘সেসময় বাংলাদেশ আন্দোলনমুখর ছিল। কেননা, ভাষা আন্দোলনতো ৫২ সালেই শুরু হয়নি, ১৯৪৮ সালে শুরু হয়, যখন মি. জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। তারপর এই আন্দোলন গড়াতে গড়াতে ৫২ সালে এসে রক্তাক্ত এক অধ্যায়ের সূচনা হয়।’
গাফফার চৌধুরী শহীদ রফিকের মরদেহ দেখেছিলেন। পুলিশের গুলিতে রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ তিনি। কী দেখেছিলেন সেদিন? সেসময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী গাফফার চৌধুরী বললেন, আমি আরো দু’জন বন্ধু নিয়ে গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের আউটডোর কক্ষে। সেখানে বারান্দায় শহীদ রফিকের লাশ ছিল। মাথার খুলিটা উড়ে গেছে। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তখন ছাত্র। তিনি তার ক্যামেরায় রফিকের ছবি তোলেন। রফিকের মরদেহ দেখে গাফফার চৌধুরীর মনে হয়েছিল, যেন তার নিজের ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে। তখনই তার মনে গুনগুনিয়ে ওঠে একটি কবিতা, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। সেই কবিতা পরবর্তীতে গানে রূপ নেয়। তিনি বলেন, এই কবিতায় প্রথমে আব্দুল লতিফ সুর দেন। তারপরে আলতাফ মাহমুদ সুর দেন। আলতাফের সুরেই এটা প্রভাত ফেরির গান রূপে গৃহীত হয়।
ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও বীরত্বের প্রতীক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি এখানে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় জাতি। সারাবছর বেদীটি পড়ে থাকে অবহেলায়। এর চত্বরে এখন ধুলোবালি আর ময়লা লেগে আছে। শহীদ মিনারের নকশা করেছেন শিল্পী হামিদুর রহমান। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এটি উদ্বোধন করেন শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম। ১৯৮৩ সালে কিছুটা বিস্তৃত করে বর্তমান অবস্থায় আনা হয়। আবদুল গাফফার চৌধুরী বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন যেমন দেখেছেন, তেমনি দেখেছেন ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সহজ করে বললে, একটি ভাষাকেন্দ্রিক জাতির আন্দোলন, স্বাধীনতা, উত্থান সবই তার নখদর্পণে। তার কাছে জানতে চাই, গত কয়েক দশকে বাংলা ভাষার ধরণবরনে কোন পরিবর্তন কি খুঁজে পান?
গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, বাংলা ভাষায় দারুণ পরিবর্তন হয়েছে। সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর- এর যুগ থেকে শুরু করে বা বঙ্কিমের ভাষা যেরকম প্রমথ চৌধুরীর আমলে পরিবর্তিত হয়ে অনেকটা কথ্য ভাষায় রূপ নিয়েছিল, তেমনি আজকের বাংলা ভাষা অনেকটাই গণভাষায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে আবার আমাদের বাংলা ভাষায় গ্রহণি শক্তি বেশি। আরবি, ফারসি, ইংরেজি- সব ভাষা থেকেই আমরা শব্দ আহরণ করি। এখনও সেই আহরণ পর্ব চলেছে। পরিবর্তিত বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ এবং সুগঠিত করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে এক দশক আগে বলেছিলেন এই গুণী লেখক, সাংবাদিক।
বিশিষ্ট সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীনতাপদক প্রাপ্ত লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী তার মেধা-কর্ম ও লেখনীতে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন ও বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মননকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সমর্থন করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত সাপ্তাহিক জয় বাংলা পত্রিকায় বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। পরবর্তীতে তিনি প্রবাসে থেকেও তার লেখনীর মাধ্যমে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে আমার বহুস্মৃতি। অনেক পরামর্শ পেয়েছি। একজন বিজ্ঞ ও পুরোধা ব্যক্তিত্বকে হারালাম যিনি তার লেখা ও গবেষণায় আমাদের বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। আবদুল গাফফার চৌধুরী ভাই একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ও কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এর রচয়িতা। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের পরতে পরতে যার কর্মময় জীবনের ছোঁয়া লেগে আছে। গত নভেম্বরে যুক্তরাজ্য সফরের সময় মহান এই বর্ষীয়ান সাংবাদিককে দেখতে লন্ডনে তার বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে আমার সঙ্গে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে স্মৃতিকথা থেকে শুরু করে আমাদের দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রদ্ধেয় ছোট আপা শেখ রেহানার সাথেও স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন খুব আন্তরিকভাবে। কথা বলেছেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা নিয়ে। তাঁর সান্নিধ্যে কাটানো এই সময়ের কথোপকথন নিয়ে পরবর্তীতে একটি লেখা লিখবো বলে স্থির করেছিলাম, লেখাটি লিখা শুরু করেছি। আজ শুনলাম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে আবদুল গাফফার চৌধুরী পরপারে যাত্রা করেছেন। কর্মবীর এই মানুষটির চলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তবুও চলে যেতে হয়। আবদুল গাফফার চৌধুরী ভাইয়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, আমিন।
আবদুল গাফফার চৌধুরী ভাইয়ের সঙ্গে এবার নভেম্বরে লন্ডনে তার বাসায় দীর্ঘ আলাপচারিতা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, একাত্তরে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। আমিও সেভাবেই তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে বলা তার এই শেষ ইচ্ছেটা পূরণ হলো না। আমি মনে করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভাই বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। একজন দেশপ্রেমিক মহৎ মানুষের শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করার ক্ষেত্রে আমিও সর্বাত্মক কাজ করতে চাই। আর জাতির সামনে তার মতো অনুকরণীয় মানুষের জীবনী পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার সম্পর্কে জানার আরো সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
লেখক :সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
পরিচালক, এফবিসিসিআই
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ