আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে ড. কাজী এরতেজা হাসানের শোক
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ।
আবদুল গাফফার চৌধুরী স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দৈনিক ভোরের পাতা ও দ্য ডেইলি পিপলস টাইমস এর প্রকাশক ও সম্পাদক, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, ড. কাজী এরতেজা হাসান সিআইপি। তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
এক শোকবার্তায় তিনি জানিয়েছেন, আবদুল গাফফার চৌধুরী ভাই একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ও কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় গান "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো" এর রচয়িতা। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের পরতে পরতে যার কর্মময় জীবনের ছোঁয়া লেগে আছে। গত নভেম্বরে যুক্তরাজ্য সফরের সময় মহান এই বর্ষীয়ান সাংবাদিককে দেখতে লন্ডনে তার বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে আমার সঙ্গে দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে স্মৃতিকথা থেকে শুরু করে আমাদের দুই নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রদ্ধেয় ছোট আপা শেখ রেহনার সাথেও স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন খুব আন্তরিকভাবে। কথা বলেছেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা নিয়ে। তাঁর সান্নিধ্যে কাটানো এই সময়ের কথোপকথন নিয়ে পরবর্তীতে একটি লেখা লিখবো বলে স্থির করেছিলাম, লেখাটি লিখা শুরু করেছি। আজ শুনলাম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে আবদুল গাফফার চৌধুরী পরপারে যাত্রা করেছেন। কর্মবীর এই মানুষটির চলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তবুও চলে যেতে হয়। আবদুল গাফফার চৌধুরী ভাইয়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, আমিন।
গভীর শ্রদ্ধা…
উল্লেখ্য, ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন।
আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৫০ সালে পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময়ে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।
মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এ সাংবাদিক।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।
খ্যাতিমান এ ব্যক্তিত্ব ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরো অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।