প্রকাশ: সোমবার, ১৬ মে, ২০২২, ৮:০৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অবাধে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ডুবে গেছে প্রায় ৫শ বিঘা জমির পাকা ধান। এদিকে কৃষকেরা অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে হাঁটু পানির মধ্য থেকে ধান কাটিয়ে নিচ্ছেন। পানির মধ্যে থেকে কিছু ধান পচেও যাচ্ছে।
সোমবার (১৬ মে) উপজেলার তাড়াশ সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, মথুরাপুর ও শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় বিস্তীর্ণ সমতল ফসলি জমির মাঝে পুকুর থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই আশপাশের জমিগুলোতে জলাবদ্ধ হয়ে ফসলী জমির পাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
মাধবপুরের মোখলেসুর পাঁচ বিঘা, গোলাপ চার, মুকুল দুই ও মাসুদ রানা তিন, সাস্তান গ্রামের আজিজ পাঁচ শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী চার এবং আব্দুস সামাদ দুই ও মাহাতো কর্মকার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। অতিরিক্ত মজুরিতে শ্রমিক নিয়ে পানির মধ্য থেকে ধান কেটে নিচ্ছেন। জলাবদ্ধতায় তাদের ধানের অর্ধেক নষ্ট হয়ে যাবে। তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমির এ মাঠটি দুই বছর আগে তিন ফসলি ছিল। ধান, সরিষা ও শীতকালীন সবজি আবাদ করা যেত উর্বর এ জমিগুলোতে। কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে এলাকার কৃষকদের কাছে জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন শুরু করেন। সেই থেকে শুরু এরপর আর শেষ হয়নি। একে একে এই মাঠে ১৭/২০টি পুকুর খনন করা হয়েছে-এখনও খনন চলছে। প্রায় ৮/৯শ বিঘা ধানী জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে পুকুরের আশপাশের সব জমি জলাবদ্ধ হয়ে সাড়া বছরই চাষ অযোগ্য হয়ে থাকে। শুধুমাত্র বোরো মৌসুমে ধানটা চাষ করা যায়। কিন্তু এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সেই বোরো ধান চাষেও লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বুলন চন্দ্র বসাক বলেন, এক সময় মাধবপুর হয়ে সাস্তান পর্যন্ত একটি ছোট নদী ছিল। পুকুর খননের কারণে নদীটি আবদ্ধ হয়ে গেছে। সান্তান থেকে শ্রীকৃষ্ণপুর পর্যন্ত অসংখ্য পুকুর খনন হয়েছে। ফলে এ মাঠের জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটছে। পুকুর খননের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ারটা আমাদের নেই। তবে অভিযোগ পেলেই উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করলেও কিন্তু রাতের আঁধারে চলে পুকুর খনন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাউল করিম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বেশ কিছু জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলেই আমরা ক্যানেলের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে দিচ্ছি। সাস্তান এলাকাতেও ক্যানেল করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে।