বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবাধে আসছে শত শত গবাদিপশু, ও মাদকদ্রব্য। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতি দিন রাত যাচ্ছে খাদ্য দ্রব্য,জ্বালানি তেল,অকটেন, মাছ,তরিতরকারিসহ বিভিন্ন মালামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। দেশটির চলমান সংঘাতের মধ্যেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দেশের চোরাকারবারিরা। স্থানীয়দের দাবি, চোরাকারবারের মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকলেও তাদের চত্রছায়ায় গরু, মহিষ,ছাগল ও মরণ নেশা ইয়াবাসহ কয়েক প্রকার মাদকদ্রব্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে নাইক্ষংছড়ি,গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ার দুই থেকে তিন শতাধিক মানুষ।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন সীমান্ত পেরিয়ে অবাধে শত শত গরু-মহিষ,মাদকদ্রব্য আসার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, চোরাচালান বিরোধী টাস্কফোর্স এর মাধ্যমে যদি সীমান্ত নিয়োজিত বাহিনী অভিযানের জন্য বলে, যে কোন সময়ে টাস্কফোর্স এর অভিযানের জন্য উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছি অভিযানে যেতে। এদিকে মিয়ানমারের গরু-মহিষ আসায় দেশীয় খামারিরা বৃহত্তর গর্জনিয়া বাজার,চাকঢালা ও বাইশারী বাজারে বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে বিপাকে পড়েছে এ-সব এলাকার খামারিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গভীর রাতে পাহাড়ি পথ দিয়ে সারি সারি গরু-মহিষ। পায়ে হেঁটে আসা এ-সব পশু টানছেন চোরাকারবারিরা। সম্প্রতি সীমান্তে বিজিবির অভিযান চলমান না থাকায় চোরাকারবারিরা বীরদর্পে, শত শত গরু-মহিষ, বিদেশি সিগারেট,ইয়াবা, আইয়েস বাংলাদেশে আসছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ও গর্জনিয়া,কচ্ছপিয়ার বিভিন্ন সড়ক থেকে গবাদিপশু তুলে দেয়া হচ্ছে ট্রাকে ট্রাকে। আর বিভিন্ন চোরাই পথ দিয়ে যাচ্ছে সিগারেট ও মাদকদ্রব্য। এভাবে রাত যতই গভীর হয়, ততই সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসে মিয়ানমারের গরু-মহিষ সাথে আসছে মরণ নেশা ইয়াবা ও সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য।
স্থানীয়রা বলছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কালাচাইন্দার পথ, বামহাতিরছরা, ফুলতলী, ভালুখাইয়া পয়েন্টগুলোতে সক্রিয় চোরাকারবারিরা। এছাড়াও মাঝির কাটা,বেল তলি ,বাঘ ঘোনা, মরিচ্যাচর, বাইশারী, নারিচবুনিয়া দিয়ে যারা গরু প্রচারে নিয়োজিত তাদের হাতে রয়েছে অস্ত্র। মূলহোতা প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন হলেও তাদের চত্রছায়ায় রয়েছে দুই থেকে তিন শতাধিক সদস্য। যারা প্রতিদিনই শত শত মিয়ানমারের গরু-মহিষ ও ছাগলসহ মাদকদ্রব্য সীমান্ত দিয়ে অবাধে নিয়ে আসছে। গবাদিপশু মজুত করছে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, ও চকরিয়াতে। আর চোরাই পথ দিয়ে মাদকদ্রব্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, এখানে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের কয়েক'শ লোকও আছে। ওরা আবার অস্ত্রধারী। পাচারের সময় বিজিবির অভিযান চলমান না থাকায় তারা বাঁধাও দিচ্ছে। এভাবে প্রভাবশালী সিন্ডেকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে মিয়ানমারের থেকে গরু আসায় বিপাকে দেশীয় খামারিরা। তাদের দাবি, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সীমান্ত দিয়ে এসব গবাদিপশু আসায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজারের রামুর খামারি মুর্শিদ, আব্দুর রশিদ বলেন, এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আমরা ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারছি না। সবকিছুর দাম বেশি। আমরা গরুও আনতে পারছি না। আর এভাবে চোরাই গরু-মহিষ আসায় সরকারও কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। চোরাকারবারিদের ধরতে কাজ করছে চোরাচালান বিরোধী টাস্কফোর্স এর কথা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উঠলেও তা এখন আপাতত বন্ধ বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া।
তিনি বলেন, বিজিবি চেষ্টা করছে চোরাকারবারিদের রুখতে। এর পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা চলমান রয়েছে।
তবে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিরা এ-সব কাজে জড়িয়ে পড়ায় তারা আমাদের সহায়তা করছে না। আমরা সবাই মিলে চোরাচালান বিরোধী টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এটা বন্ধ করতে চেষ্টা করছি। গত এক মাস আগে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা গরু-মহিষ, ছাগল,সুপরী জব্দ করে নিলামে বিক্রি করে কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা করে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি। গবাদিপশু, ইয়াবা,সিগারেট সংক্রান্ত বিষয়ে এ পর্যন্ত ৮ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবির সাথে বন্দুক যুদ্ধে ২ জন,বাকীরা সন্ত্রাসী চোরাকারবারিদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছে ৬ জন। ভবিষ্যতে এধরণের চোরাই ব্যবসা চালু থাকলে আর অসংখ্য মানুষ নিহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল মিয়ানমারে নেওয়ার ফলে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী।
যেখানে ১৫-২০ টাকার আলো বর্তমান কেজি ৭০ -৮০ টাকা এভাবে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের দখলে থাকা আরকান রাজ্যে বাংলাদেশের খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামালের উপর নির্ভর করে চলছে।