তার মনোনয়ন কেন্দ্রীক এই সাফল্যে গুরুদাসপুরের সর্বত্র সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অসন্তোষ রয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলার বৃহৎ একটি অংশেরও। তবে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে পশ্চিম বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌর এলাকায়। প্রবীণ নেতা আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে ৩০ আগস্ট আসনটি শূন্য হওয়ায় এখানে উপনির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। এই আসনের ভোটগ্রহণ হবে ১১ অক্টোবর।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বিএনপিকে পরাজিত করে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মূলত আওয়ামী লীগের পক্ষে এই নেতারই দুই উপজেলায় নিজস্ব ভোট ব্যাংক ছিল। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে ৭ বার মনোনয়ন পেয়ে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই নেতার মৃত্যুতে ৪৭ বছর পর আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, দল মনোনীত প্রাথী ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ২০১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সখ্য তৈরি করেন। প্রয়াত সংসদ সদস্যের মদদপুষ্ট হওয়ায় ২০১৫ সালের দিকে হঠাৎ করেই এই নেতা জেলা কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আকরামুল ইসলামের মৃত্যুতে ২০১৮ সালের দিকে সেখানে উপনির্বাচনের আয়োজন করা হয়। ওই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৭ জন প্রার্থী দলীয় প্রতীক নৌকা চান। তবে সে সময় ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন এই প্রাথী।
বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান জানান, ২০২০ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। সর্বশেষ এই নেতা ২০২২ সালে বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দাঁড়ালেও সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল কুদ্দুস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামের একাধিক নেতা-কমী জানান, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়া অবস্থায় জাসদ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। লেখাপড়া শেষের পর বড়াইগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় রোগী দেখা শুরু করেন। একপর্যায়ে ২০০৫ সালের পরে বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতাল। মূলত তখন থেকে তিনি চিকিৎসা পেশায় মনোনিবেশ করেন। আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে কোনোভাবেই এই নেতা সম্পৃক্ত ছিলেন না। অথচ তাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে।
অনেক নেতা মনে করেন, নাটোর-৪ আসনে (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) ৭ বার নৌকা প্রতীকে ভোট করে ৫ বার জয়ে এনেছিলেন প্রয়াস এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস। অথচ একই আসনে ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করা সিদ্দিকুর রহমানকে এতো কম সময়ে দলীয় প্রতিক নৌকা দেওয়ায় নেতাকর্মী-সমর্থক এমন কি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
দলের কয়েকজন প্রবীণ নেতা জানান, গুরুদাসপুরের শাহনেওয়াজ আলী, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আহম্মদ আলী মোল্লা ও বড়াইগ্রামের কেএম জাকির পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা। এসব নেতারা ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেছেন। অথচ এসব নেতাকে মূল্যায়ন না করে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করা সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্ক না থাকলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
মনোনয়ন চাওয়া গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, জ্যেষ্ঠাতা অনুসারে সিদ্দিকুর রহমান রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী এবং নবীন। সিদ্দিকুরের চেয়ে আমি, শাহনেওয়াজ, জাকির হোসেনসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলাম। কিন্তু আমাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ কারণে দুই উপজেলাতেই অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বড়াইগ্রাম উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কালাম আসাদ জোয়ার্দার ও গুরুদাসপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সরকার মেহেদী হাসান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে সিদ্দিকুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। মনোনয়নের খবরে তারা দুই উপজেলাতে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এখন বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় নেতা-কমীরা নিরলসভাবে কাজ করছে।
নৌকার ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।