সৎ সাহসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সৎসাহস ও বীরত্ব মুমিনের স্বভাবজাত ভূষণ। ইসলামের দৃষ্টিতে সৎ সাহস হলো- পরকালীন কল্যাণ লাভে মুমিনের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং সত্যের পক্ষে ভয়হীন পথচলা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করলে আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হওয়া যায় না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও আখেরাতে এবং সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎ পথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা তাওবা: ১৮)
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা মুমিন হয়ে পরকাল কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৯)
একজন মুসলমান কখনও কাপুরুষ হতে পারে না। বিশ্বের সকল ভয়কে উপেক্ষা করে মহা পরাক্রমশালী সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভয়ে আজীবন তাঁরই হুকুমের গোলামি করবে প্রকৃত মুমিন। প্রিয়নবী (স.) ছিলেন সর্বাপেক্ষা সাহসী পুরুষ। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘নবী (স.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন এবং সর্বাপেক্ষা সাহসী ও দানশীল।’ (বুখারি: ২৮২০)
এমনকি তিনি সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে এই মর্মে শপথ নিয়েছেন যে তারা যেন হক কথা বলতে ভয় না পায় এবং জান্নাতের রাজপথে বীরদর্পে চলতে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। উবাদাহ ইবনে সামেত (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলাম। তন্মধ্যে অন্যতম বাইয়াত ছিল এই যে ‘আমরা যেখানেই থাকি না কেন, হকের ওপর সুদৃঢ় থাকব বা হক কথা বলব। আর আল্লাহর পথে চলতে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে আমরা পরওয়া করব না।’ (বুখারি: ৭২০০)
হক কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ। নবী (স.) বলেছেন, ‘সর্বাপেক্ষা ফজিলতপূর্ণ জিহাদ হচ্ছে জালিম শাসক বা অত্যাচারী নেতার সামনে ইনসাফপূর্ণ কথা বলা।’ (তিরমিজি: ২১৭৪)
মহান আল্লাহ শক্তিশালী ও দৃঢ় মানসিকতার মুমিনদের বেশি ভালোবাসেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেন, ‘শক্তিমান মুমিন দুর্বল মুমিনের তুলনায় উত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। অবশ্য উভয়ের মধ্যে কল্যাণ আছে। তোমাদের জন্য উপকারী প্রতিটি উত্তম কাজের প্রতি আগ্রহী হও এবং অলস বা গাফেল হয়ো না। কোনো কাজ তোমাকে পরাভূত করলে তুমি বলো, আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন এবং নিজ মর্জিমাফিক করে রেখেছেন। ‘যদি’ শব্দ সম্পর্কে সাবধান থাকো। কেননা ‘যদি’ শয়তানের কর্মের পথ উন্মুক্ত করে।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৬৮)
কৃপণতা, ভীরুতা, কাপুরুষতা ইসলামে পছন্দনীয় নয়। বরং এগুলো ঈমানকে ত্রুটিযুক্ত করে। মানুষকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। ভীরু, কাপুরুষ ও কৃপণ মানসিকতা দ্বারা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, জমিনে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেওয়াও অসম্ভব। এ কারণে মহানবী (স.) সর্বদা এই ত্রুটিগুলো থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।
মুসআব (রহ.) থেকে বর্ণিত, সাদ (রা.) পাঁচটি জিনিস থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি এগুলো মহানবী (স.) থেকে উল্লেখ করতেন। তিনি এগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে এ দোয়া পড়তে নির্দেশ দিতেন যে, ‘হে আল্লাহ! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাইছি। আমি কাপুরুষতা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি অবহেলিত বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আমি দুনিয়ার ফেতনা অর্থাৎ দাজ্জালের ফেতনা থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আমি কবরের আজাব থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (বুখারি: ৬৩৬৫)
তাই আমাদের উচিত, অলসতা, দুর্বলতা ও ভীরুতার জাল ছিঁড়ে শক্তি-সামর্থ্য, সাহসিকতা ও বীরত্ব অর্জন করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।
ভোরেরপাতা/এফ