নাটোর ২ আসনের (সদর-নলডাঙ্গা) সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডন সফর করে দেশে ফিরেছেন। ফিরেই আবারো নলডাঙ্গা পৌর মেয়রের ওপর হামলা করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন। এ অবস্থায় তার লন্ডন সফর নিয়ে এলাকায় ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। কেন তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন, এ বিষয়ে তারই অনুসারীরা হতাশ হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে বাংলা ৫২।
নাটোরে এমপি শিমুলের সার্বক্ষণিক একজন সঙ্গী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শফিকুল ইসলাম শিমুল মূলত আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকেট নিশ্চিত করার জন্যই লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দলীয় হাইকামন্ডের কাছে তিরষ্কৃত হয়েই দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে এমপি শিমুল তার ঘনিষ্ঠজনদেরকে বলছেন, যার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তিনি কোনো চূড়ান্ত কথা দেননি। তবে মূল দলের সাধারণ সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি আমার পক্ষে আছেন। তার ভরসায় আছি। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাবোই।
যদিও আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলকে ভাঙিয়ে অর্থ বিত্তের মালিক বনে যাওয়া বিতর্কিতদের বাদ দেয়া হবে। সেখানে তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নামে কানাডার বাড়ি কেনার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে চেয়েছিলহাইকোর্ট।
দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের নিয়ে এক মামলার শুনানির সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
২০২১ সালে এ ঘটনায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, এর আগে দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের একটি তালিকা দাখিল করা হয়।
দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকায় নাটোরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নাম বাদ পড়ায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে নাটোরের সানরাইজ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. রেজাউল চৌধুরী হাইকোর্টে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেন।
আদালত আবেদন নিষ্পত্তি করে তার কাছে নাটোরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রীর নামে কানাডার বাড়ি কেনার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে তা তাকে নিজে হলফনামা করে হাইকোর্ট, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে আদেশ দিয়েছেন।
‘স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন এমপি শিমুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার টরন্টো থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের নিরিবিলি শহর স্কারবোরো। শহরটির হেয়ারউড সড়কের ৭৩ নম্বর বাড়িটির মালিক একজন বাংলাদেশি নাগরিক। নাম শামীমা সুলতানা জান্নাতী। গত বছরের শুরুর দিকে প্রায় দুই মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার খরচ করে ডুপ্লেক্স ওই বাড়িটি কেনেন তিনি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট অনুযায়ী তার পেশা ‘গৃহবধূ’ হলেও শামীমা কোনো সাধারণ নারী নন, নাটোরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী।
টরন্টোর ল্যান্ড রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল বলছে, ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি পাঁচ রুম, পাঁচ বাথ এবং তিনটি পার্কিংসহ ওই বাড়িটির মালিকানা বদল হয়। সঞ্চিত এবং সুধীর মদন নামের দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার কানাডিয়ান ডলারে বাড়িটি কেনেন শামীমা সুলতানা জান্নাতী। ওই দিনই দুই লাখ ৭০ হাজার ডলার ট্যাক্সও পরিশোধ করেন তিনি। সব মিলিয়ে বনেদি বাড়িটি কিনতে তার খরচ হয় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
অনুসন্ধান বলছে, স্ত্রীর নামে শিমুলের আলিশান বাড়ি কেবল কানাডাতেই সীমাবদ্ধ নয়। নাটোর সদরেও বিদেশি নকশার একটি ‘রাজপ্রাসাদ’ গড়েছেন তিনি। করোনাকালে নির্মিত ‘জান্নাতী প্যালেস’ নামের ট্রিপ্লেক্স ওই বাড়িটি নির্মাণে ঠিক কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তার সঠিক তথ্য কেউ দিতে না পারলেও স্থানীয়দের ভাষ্য, দশ কোটি টাকার নিচে এমন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাড়ি নির্মাণ সম্ভব নয়।
নাটোরের লোকেরা ভবনটিকে ‘এমপি বাড়ি’ হিসেবে জানলেও দলিল অনুযায়ী এই বাড়িটিরও মালিক শামীমা সুলতানা জান্নাতী। কাগজে-কলমে দেশ-বিদেশে দু-দুটি অভিজাত বাড়ির মালিক হলেও এমপিপত্নী শামীমার ব্যক্তিগত আয়-ব্যয়ের হিসাব বেশ চমকপ্রদ।
তিন বছর আগে (২০১৮-১৯) শামীমার মোট সম্পদের মূল্য ছিল দুই কোটি ১৪ লাখ টাকা। পরের বছর (২০১৯-২০) এই সম্পদ মাত্র ১৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি পায়। তবে চলতি বছর অর্থাৎ করোনা জর্জরিত ২০২০-২১ অর্থবছরে শামীমার সম্পদ বেড়েছে চার কোটি ২২ লাখ টাকারও বেশি, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। এর ফলে শামীমার মোট সম্পদের মূল্য এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ছয় কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ২৮৪ শতাংশ।
সরকারি খাতায় ব্যক্তিগত আয়-ব্যয়ের হিসাবে শামীমার সম্পদের এমন ঊর্ধ্বগতির সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা যেমন নেই, তেমনি মোট সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে কেনা কানাডার বাড়িটিরও কোনো উল্লেখ কোথাও নেই।