
আজ শেরপুর প্রেসক্লাবে গিয়েছিলাম ইজিবাইক চালক উজ্জল হত্যাকান্ডে র্যাব ১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্প কর্তৃক পাচজন আসামী গ্রেফতার ও ছিনতাইকৃত ইজিবাইক উদ্ধার সংক্রান্তে ব্রিফ করতে।
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য অটোচালককে হত্যার অনেকগুলো মামলা দেখেছি চাকরীজীবনে, এদেশের দরিদ্র ও বেকার শ্রেনীর বড় একটি অংশ জীবিকার জন্য অটো চালকের পেশা বেছে নেন, মাঝেমাঝেই এ ধরনের বেপরোয়া মাদকাসক্ত ছিনতাইকারীদের কবলে পরে জীবন দিতে হয় অনেককে, এজন্য ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের চেয়ে আমি বেশী দায়ী মনে করি যারা অল্প কিছু লাভের আশায় চোরাই এসব যানবাহন কেনেন তাদের।
নিহত উজ্জল মিয়া (৪২), পিতা-মৃত নুর ইসলাম @ হলু শেখ, সাং-খুনুয়া চরপাড়া (মধ্যপাড়া), থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর ইজিবাইক চালক, সে তার মালিকানাধীন ইজিবাইকটি নিজ গ্রাম এবং আশেপাশের গ্রামসহ শেরপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় চালাইয়া জীবিকা নির্বাহ করিয়া আসিতেছিলো। গত ২৮/০৪/২০২৩ ইং তারিখ রাত্রি আনুমানিক ৮:০০ ঘটিকার সময় নিজ বাড়ী হতে তাহার ইজিবাইক নিয়ে ভাড়াচালানোর জন্য বের হয় এবং ২৯/০৪/২০২৩ ইং তারিখ রাত অনুমান ০১:০০ ঘটিকার সময় নিহত উজ্জল মিয়া (৪২) তার ভাইকে ফোনের মাধ্যমে জানায় যে, সে ঘুঘুরাকান্দি এলাকায় আছে। তারপর থেকে নিহত উজ্জল মিয়া (৪২) বাড়ীতে না ফেরায় বাড়ীর লোকজন তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ঐদিনেই সকাল আনুমানিক ১০:৩০ ঘটিকায় বাদী ফোনের মাধ্যমে জানতে পারে যে, শেরপুর থানাধীন খুনুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাইদুল মেম্বারের বসতবাড়ী হইতে আনুমানিক ৩০০ গজ দক্ষিন-পূর্ব দিকে জনৈক দোছ মাহমুদের আবাদী জমির কোনায় অজ্ঞাত লাশ উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পায়, বাদীসহ গ্রামের লোকজন উজ্জল মিয়া (৪২) এর লাশ সনাক্ত করে।
উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর থেকে র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের স্কোয়াড্রন লিডার আশিক ও এএসপি সবুজ উক্ত ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। দুইদিন আগে আমাদের টিম সারাদিন সাভার এলাকায় হত্যাকারীর জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে রাতে ফিরে আসার পরদিনই আবার ঐ এলাকায় আসামীর অবস্থান শনাক্ত করতে পারে।
অবশেষে গতকাল ০৭/০৫/২০২৩ ইং তারিখ অনুমান ১৩:৪৫ ঘটিকায় ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন কলেজ রোড এলাকা হতে হত্যা মামলার প্রধান সন্দিগ্ধ মোঃ শামীম মিয়া (৩০) আটক করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধৃত মোঃ শামীম মিয়া (৩০) নৃশংস হত্যা কান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন ধৃত মোঃ শামীম মিয়া ইজিবাইক ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে ভীমগঞ্জ হতে দশআনি যাওয়ার জন্য ইজিবাইক ভাড়া করে। যাওয়ার পথে ইজিবাইক চালককে শেরপুর জেলার সদর থানাধীণ ভীমগঞ্জ বাজারের সাথে ব্রীজের নীচে ইলেক্ট্রিক তার দিয়ে গলায় পেচিয়ে হত্যা করে লাশ শেরপুর জেলার সদর থানাধীন খুনুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় ধান ক্ষেতের ভিতর ফেলে রেখে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
তার স্বীকারোক্তিমতে জামালপুরে আর্ক আসামীর বসতবাড়ীর ধানের গোলার ভিতর ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটির বিভিন্ন পার্টস ও যন্ত্রাংশ লুকিয়ে উদ্ধার করা হয় , এ সংক্রান্তে আরও চারজনকে শেরপুরলও জামালপুপের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ও ছিনতাইকৃত ইজিবাইক এর ০৪ টি ব্যাটারী উদ্ধার ও আটক করা হয়।সকল আসামীরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।
চাকরীজীবনে এ ধরনের ব্রিফিং অনেকবার করেছি, ব্রিফিং শেষে ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে গিয়ে যা দেখলাম তা আগে কখনও পাইনি, ভিকটিমের মোট ৬ টি সন্তান, সকলের বয়স ৫-১৫ এর মধ্যে, ৫ টি মেয়ে ১ ছেলে।ভিকটিমের লাশ যেদিন উদ্ধার হয় সেদিনই তার সর্বশেষ সন্তান একটি মেয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, কড়া রোদে দাড়িয়ে উজ্জলের স্ত্রী তার আটদিন বয়সী মেয়ে ও অন্য পাচ সন্তানসহ স্বামী হত্যার বিচার চাইছিলেন, আমি আট দিন বয়সী শীর্ণ শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর নীরবে শুনছিলাম।
র্যাবের তৎপরতায় তার স্বামীর হত্যাকারী গ্রেফতার হয়েছে, উদ্ধারকৃত অটোটিও হয়ত আদালতের আদেশে ফেরত পাবেন, তবে এই ছয় সন্তান নিয়ে কিভাবে তিনি বাচবেন আমি ভেবে পাইনা।শেরপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকগন পরিবারটিকে কিছু সহায়তা করেছে, আমাদের পক্ষ থেকেও করা হবে, আপনারা কেউ ইচ্ছুক থাকলে যোগাযোগের অনুরোধ রইল।
(লেখাটি ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া)