
আমি নিতান্তই একজন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। দেশকে ভালোবাসি বলে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি সাংবাদিকতা। যে পেশার মাধ্যমে কোনো প্রকার টাকা-পয়সা খরচ না করেও দেশ ও মানুষের সেবা করা যায়।
যদিও এই পেশার মানুষদের বেতন কাঠামো খুব বেশি শক্ত নয়, আবার নরবরেও নয়। তবে, দেশের গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের বেতন বিষয়ে সরকারি নিতীমালা থাকলেও সবখানে, সবার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়! এছাড়া হুটহাট কর্মী ছাটাইয়ের ঘটানাতো আছেই। ফলে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে গিয়ে টেনশনের পাশাপাশি হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। শুধুমাত্র আমি বা আমরাই নই, সমাজের উচ্চবিত্ত ছাড়া বাকি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষই বুঝতে পারছে, বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির এই বাজারে না মরে বেঁচে থাকাটা কতো কষ্টের, কতোটা যন্ত্রনার!
এবার আসি মূল আলোচনায়-জাতিগতভাবে আমরা বাঙালি, আমাদের দিনে তিন বেলা খাবার খাওয়ার প্রচলন ও অভ্যাস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে, এই প্রচলনটা শহরে কিছুটা কম থাকলেও গ্রামে তা ঠিকই আছে। এখন যদি জানতে চাওয়া হয়, গ্রাম বা শহর যাই বলি না কেন; মানুষ কি দু বেলা বা তিন বেলা পেট ভরে স্বস্তিতে খেতে পারছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তর হবে ‘না’! কেন? এর উত্তর একটাই পাওয়া যাবে, তা হলো- ‘নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি’।
আমাদের দেশে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা কত? ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, ক্ষেত্র বিশেষ হাজার টাকাও হতে পরে। এখন যদি ঐ দিনমজুরের ঘরে ৫জন সদস্য থাকে তবে কি সে পারবে ঠিকমতো তার পরিবারের সদস্যদের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা আর বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে? এর উত্তর দেয়া কঠিন।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে- সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) থেকেই কার্যকর হবে।
বাজারে শুধুমাত্র তেল বা চিনির দামই নয়, হু হু করে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনিয় সকল প্রকার পণ্যের দাম। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। বিশেষ করে কাঁচা বাজারে গেলেই মানুষ বুঝতে পারে যে, তার পরিবারের সদস্যদের তিন বেলা খাবারের জন্য প্রয়োজনিয় মাছ-মাংস আর সবজি কিনতে তার কি পরিমাণ টাকা গুণতে হবে। এবার যান মসলার বাজারে, সেখানেও একই অবস্থা। এবার যাবেন প্রসাধনীর বাজারে সেখানেও ব্যতিক্রম কিছু নয়।
আসলে সব যায়গায় যদি একই অবস্থা থাকে তবে সাধারণ মানুষেরা যাবেটা কোথায়? কোথায় গেলে মিলবে বেঁচে থাকার জন্য একটু স্বস্তি। সমাজের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর কর্তাগণ হারে হারে টের পাচ্ছেন বাস্তবতা কতোটা কঠিন। তারা জানেন যে, দেশে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও তাদের ইনকাম/বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে পুরোনো বেতন আর রোজগারে বর্তমান বাজারে ঠিকে থাকাটা কতো বড় চেলেঞ্জ। তবুও থেমে নেই জীবন, চলছে কচ্ছপের গতিতে, চলবেই।
লেখক: সাংবাদিক