
প্রস্তাবিত “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ”-এর একাধিক ধারা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তামাকজাত পণ্যের খুচরা বিক্রেতারা। তাদের আশঙ্কা, সংশোধনীগুলো বর্তমান আকারে কার্যকর হলে নগরভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসা, আত্মকর্মসংস্থান এবং নিম্ন আয়ের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খুচরা বিক্রেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে আয়োজিত অংশীজন সংলাপে তাদের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক, যাতে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা, ক্ষুদ্র ব্যবসার কাঠামো এবং প্রান্তিক বিক্রেতাদের জীবন-জীবিকা সম্পর্কে নীতিনির্ধারকদের সরাসরি অবহিত করা যায়। তারা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলেও এখন পর্যন্ত প্রান্তিক পর্যায়ের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
এ বিষয়ে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ঢাকার খুচরা বিক্রেতা জামাল উদ্দিন, বাবুল মিয়া, আ. রাজ্জাক, কবির হোসেন, মো. সাকিব হাসান, কুলছুম এবং মো. শরীফ হোসেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের খুচরা ব্যবসায়ীদের জীবিকায় তামাক শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ সিগারেট বিক্রির ওপর নির্ভরশীল এবং অনেক খুচরা দোকানির মোট বিক্রয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ আসে তামাকজাত পণ্য থেকে। শুধু সিগারেটের খুচরা বিক্রিই প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সরাসরি সমর্থন করে। এ অবস্থায় সিগারেট বিক্রির জন্য পৃথক রিটেইল লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবকে তারা অবাস্তব ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।
খুচরা বিক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অধিকাংশ দোকানি স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। আলাদা রিটেইল লাইসেন্স চালু হলে প্রায় ১৫ লাখ প্রান্তিক বিক্রেতা—যাদের অনেকেরই হোল্ডিং নম্বর নেই—এই শর্ত পূরণ করতে পারবেন না। এর ফলে ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি, হয়রানি এবং দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে অতি ক্ষুদ্র ও ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও বিক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা বলেন, বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু পণ্যই খুচরা আকারে কেনেন। একক শলাকা বিক্রি বন্ধ হলে বিক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে এবং মাঠপর্যায়ে এ বিধান কার্যকর করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। এতে বৈধ বিক্রয় ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে অবৈধ তামাক বাজার বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ বা ফেরি দোকান নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবকেও তারা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। খুচরা বিক্রেতাদের মতে, প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী দোকানের মাধ্যমে তামাকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এসব দোকান বন্ধ করে দিলে হঠাৎ করে তারা আয়ের উৎস হারাবেন, যা বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে আইন প্রয়োগের সময় হয়রানি ও অপপ্রয়োগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে।
বিক্রেতারা জোর দিয়ে বলেছেন, তারা আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনায় বিশ্বাসী এবং জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব স্বীকার করেন। তবে তাদের মতে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশের বাস্তবতা, নগরভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসার কাঠামো এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তারা আশা প্রকাশ করেছেন, অংশীজনদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করে যদি একটি বাস্তবভিত্তিক, ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হয়, তবে তা একদিকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকাও রক্ষা পাবে।