স্বল্প ব্যয়ে ন্যানোকণা তৈরিতে ড. আব্দুল আজিজের যুগান্তকারী উদ্ভাবন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:০৩ পিএম

ন্যানোবিজ্ঞানে দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল উচ্চমানের স্বর্ণ ন্যানোকণা (Gold nanoparticle) তৈরি করতে খরচ, জটিলতা ও স্থায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রাখা। এই সমস্যার সহজ সমাধান নিয়ে এসেছেন ড. মো. আব্দুল আজিজ ও তার গবেষণা দল। তারা এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা সহজ, সাশ্রয়ী এবং টেকসই।
আব্দুল আজিজ সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলসের লিড রিসার্চ সায়েন্টিস্ট; ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ সেন্টার ফর হাইড্রোজেন টেকনোলজিস অ্যান্ড কার্বন ম্যানেজমেন্ট এবং সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষক।
আন্তর্জাতিক জার্নাল দ্য কেমিক্যাল রেকর্ড ও গোল্ড বুলেটিনে প্রকাশিত এ গবেষণায় ড. মো. আবদুল আজিজ ও তার দল দেখিয়েছেন, পামোয়িক অ্যাসিড নামের একটি সস্তা ও নিরাপদ রাসায়নিক ব্যবহার করে ঘরোয়া তাপমাত্রায় মাত্র কয়েক মিনিটে উচ্চমানের স্বর্ণ ন্যানোকণা তৈরি করা যায়।
এই পদ্ধতিতে কোনো জটিল যন্ত্রপাতি, ব্যয়বহুল উপকরণ বা ক্ষতিকর রাসায়নিক লাগে না। পামোয়িক অ্যাসিড একই সঙ্গে রিডিউসিং এজেন্ট এবং স্ট্যাবিলাইজার হিসেবে কাজ করে। ফলে তৈরি হওয়া ন্যানোকণা দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য থাকে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এসব কণা ১০ বছরেরও বেশি সময় স্থিতিশীল থাকে—যা প্রচলিত অনেক ন্যানোকণাতেই দেখা যায় না।
দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে গবেষণাগারে বারবার নতুন ব্যাচ তৈরির প্রয়োজন হয় না। এতে সময় ও খরচ কমে। ন্যানোকণাগুলো জীবদেহে ব্যবহারযোগ্য (বায়োকম্প্যাটিবল) এবং এর গায়ে থাকা কার্বক্সিল গ্রুপের কারণে সহজেই বিভিন্ন জৈব অণুর সঙ্গে যুক্ত করা যায়। এতে ড্রাগ ডেলিভারি, বায়োসেন্সিং, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ এবং শিল্প–প্রযুক্তি খাতে এর ব্যবহার আরও সহজ হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ন্যানোকণা শক্তিশালী ক্যাটালিটিক, অপটিক্যাল ও ইলেকট্রোকেমিক্যাল কার্যকারিতা দেখায়। ফলে অতি সংবেদনশীল সেন্সর, চিকিৎসা–নির্ণয় যন্ত্র ও দূষণ শনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে এগুলোর ব্যবহার সম্ভাবনাময়।
বিশ্বজুড়ে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, ড. আজিজের এই পদ্ধতি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এটি উন্নয়নশীল দেশের গবেষণাগারগুলোতেও সহজে প্রয়োগ করা যাবে। গবেষকেরা আশা করছেন, এ উদ্ভাবন ন্যানোবিজ্ঞানকে আরও সহজলভ্য করে বিশ্বব্যাপী নতুন গবেষণার পথ খুলে দেবে।