
ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে প্রায় শতাধিক পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান এনডিসি।
করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যেই সরকারের দেওয়া বিধি-নিষেধকে উপেক্ষা করে গত ১৮ জুন তারিখে কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই অনেকটা তড়িঘড়ি করে কর্মকর্তা পর্যায়ের নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করেন বিসিক চেয়ারম্যান।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর গত ৪ মার্চ ৪২ ক্যাটাগরিতে ১৩৯ পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিসিক। এই ৪২টি ক্যাটাগরির মধ্যে ২৬টি ক্যাটাগরির ৮৮টি পদের লিখিত পরীক্ষা গত ১৮ জুন গ্রহণ করে বিসিক কর্তৃপক্ষ। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক লকডাউনের আদেশকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ ভঙ্গ করে এক কক্ষে ৬০-৭০ জন বসিয়ে কোনো রকম মানহীন প্রশ্ন দিয়ে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। শুধু এটি নয় ব্যবস্থাপক হতে আঞ্চলিক পরিচালক পর্যায়ের সকল পদে জন্য একই প্রশ্নতে পরীক্ষা সম্পন্ন করে বিসিক। পরীক্ষার প্রশ্নের মান নিয়ে অনেক পরীক্ষার্থী হতাশ ও সংশয় প্রকাশ করেন। এছাড়াও পরীক্ষা কেন্দ্রের সিট প্লান ও স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০১৯ সালে ব্যবস্থাপক/সমমান পদে ভুয়া তথ্য দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে যে ৭ জন নিয়োগ পেয়েছে তারাই আবার চেয়ারম্যানকে খুশি করে উপমহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অনুসন্ধানে তথ্য চালিয়ে দেখা গেছে, মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান (সহকারী মহাব্যবস্থাপক ১৫০০০১২৭) যিনি টেলিটকের একটি কোম্পানীতে কাজ করতেন, মোহাম্মেদ হাফিজুর রহমান (সহকারী মহাব্যবস্থাপক ১৫০০০০৫১) যিনি নিউট্রিশন এন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রজেক্টে কাজ করতেন, মো. দেলোয়ার হোসেন (ব্যবস্থাপক ১৬০০০০১৯) যিনি মীর টেলিকম লিমিটেড নামে একটি কোম্পানীতে কাজ করতেন, মো. জাফর বায়েজিদ (সহকারী মহাব্যবস্থাপক ১৫০০০১৩৪), যিনি জুট মিলে কাজ করতেন, জিএম গোলাম রাব্বানী তালুকদার (সহকারী মহাব্যবস্থাপক ১৫০০০০২৯), যিনি বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে কাজ করতেন, অপেক্ষামান তালিকা হতে নিয়োগ পাওয়া মো. মাহবুবুর রহমান (ব্যবস্থাপক ১৬০০০০১৫৪) যিনি বেসরকারি ডাচ বাংলা ব্যাংকে কাজ করতেন এবং সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শেফালী খাতুন যিনি ব্যুরো বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর পদে কাজ করতেন।
শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যান ও বিসিকে দ্বিতীয় চেয়ারম্যান হিসাবে পরিচিত ও সকল টেন্ডার দুর্নীতির হোতা পরিচালক (প্রকল্প) আতাউর রহমান পারভেজকে ম্যানেজ করে ঊর্ধ্বতন পদে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার পরও চাকরি হাতিয়ে নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন চেয়ারম্যানের পিএসসহ আরো কয়েকজন।
সূত্রমতে, একের পর এক সরকার বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান। কোভিড-১৯ এর সরকার প্রত্যেক অফিসে ব্যায়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছতাসাধন করতে বলা হলেও চেয়ারম্যান স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে তার এলাকার প্রায় ২০০ জনকে দৈনিক ভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। চেয়ারম্যান তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অফিস ট্যুরের নামে পিকনিক পার্টি করে বেড়াচ্ছেন। মাসে ৩/৪ বার দলবল নিয়ে কক্সবাজারে যাওয়াসহ শুক্র ও শনিবার ট্যর করা চেয়ারম্যানের জন্য হাতের মোয়া হয়ে গেছে। চেয়ারম্যানের ট্যুরের অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে পেরণ করা হয় না। ফলে তিনি ইচ্ছাখুশি মত ট্যুর করে বেড়াচ্ছেন।
এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। ২০১৯ সালে বিসিকে নিয়োগ পাওয়া ব্যবস্থাপক/সমমান পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাগণ অফিসের কেনো কার্যক্রম না বুঝলেও সারাদিন মিটিং-সিটিং এর নামে সময় পার করে এবং অখিল তরফদারের অফিস কক্ষকে তারা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত সিনিয়র কর্মকর্তাদের মানসিক অত্যাচার করেছেন। বিসিকের পুরাতন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কোনো রূপ মূল্যায়ন করেন না। কর্মকর্তা সমিতির নির্বাচন না করে তারা সিলেকশনের জন্য চেয়ারম্যানকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন।তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা নেওয়া এবং খুবই নিম্নমানের প্রশ্নের কারণে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরীক্ষার্থীগণ।
বিশ্বস্থসূত্রে জানা যায়, বিসিক চেয়ারম্যান আগামী ৩০ নভেম্বর পিআরএল গমন করবেন। আর এই সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ সম্পন্ন করতে চান তিনি। তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য এই কাজে লিপ্ত হয়েছেন। সদ্য নিয়োগ পাওয়া এজিএম ও ডিএম (যাদের যোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল) তাদেরকেই উচ্চতর পদে আবারও নিয়োগ দিতে মরিয়া বিসিক চেয়ারম্যান। এ তালিকায় বিসিকে নিয়োগ পাওয়া ১৫, ১৭ ও ১৯ সালের কর্মকর্তারাও আছেন। ২০১৯ ও ২০ সালের নিয়োগে অপেক্ষামান তালিকা হতে নিয়োগ না দিলেও দুর্নীতিবাজ এ চেয়ারম্যান ঠিকই ২১ সালে অপেক্ষামান তিালিকা হতে নিয়োগ দিয়েছেন। যেখানে ১৪ জনের মধ্যে তার এলাকার রয়েছে ০৭ জন।
সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় বিসিক চেয়ারম্যানের এসব দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে শিল্প মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পরীক্ষার্থীদের দাবি-দুর্নীতিবাজ ও সততার লেবাজধারী চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান যাতে আর কোন নিয়োগ দিতে না পারেন এবং হাস্যকর লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে তদন্ত অন্তে নিয়োগ কার্যক্রম সমাপন্ন করা হোক। ভুক্তভোগীরা আরো চান-পিএসসি বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হোক। এ ক্ষেত্রে তারা প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গেলে বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান তিনি ভোরের পাতাকে বলেন,‘আমি একটি উত্তরার প্রোগামে আছি পরে কথা বলবো।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ভোরের পাতাকে বলেন, ‘তদন্ত চলেছে শেষ না পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।’