মানবাধিকার কর্মী বলে নিজের পরিচয় দিতে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান পছন্দ করলেও নানা কারণে দেশ-বিদেশে তিনি বিতর্কিত। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরিতে তার উৎসাহ সীমাহীন। সাম্প্রতিক সময়ে অবস্থা এমনই হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারকে আক্রমণ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় উসকানিমূলক প্রায় সব সংবাদে অবধারিতভাবে উপস্থিত থাকেন এই বার্গম্যান।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শীর্ষক বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর দীর্ঘ প্রতিবেদনটির নেপথ্য কারিগরও ছিলেন ডেভিড বার্গম্যান। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যাকে নানা রঙে সাজিয়ে সত্যের মতো করে উপস্থাপনায় এই বিতর্কিত সাংবাদিকের জুড়ি মেলা ভার।
বর্তমান সরকারকে বিশ্বের কাছে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে একের পর এক বিতর্কিত প্রতিবেদন করেছে আল-জাজিরা। যার অধিকাংশই করেছেন ডেভিড বার্গম্যান। বিতর্কিত এ সাংবাদিকের সরকার বিদ্বেষী মনোভাবের নেপথ্যে রয়েছে আত্মীয়তার নিবিড় বন্ধন। ডেভিড বার্গম্যান হলেন সরকার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক, ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাতা।
আলজাজিরার ভাষ্যকার ডেভিড বার্গম্যানের বাংলাদেশের সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক পক্ষপাত নতুন কোনো ঘটনা নয়। যুদ্ধাপরাধ, নিরাপদ সড়ক, কোটা আন্দোলন বা রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলজাজিরার নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের মাস্টারমাইন্ড হলেন এই বার্গম্যান।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক, ২০১৩ সালের মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডব নিয়ে মিথ্যা সংবাদ আর বারবার যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর অপচেষ্টা-সবকিছুতেই আছেন সাংবাদিক পরিচয় দেয়া ডেভিড বার্গম্যান। সবশেষ আল জাজিরার বিতর্কিত প্রামাণ্য চিত্র 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' এও বার্গম্যানকে দেখা গেল বিতর্কিত চরিত্রে।
২০১০ সালে শুরু হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তখন থেকেই যেন বাড়তি সোচ্চার সাংবাদিক নামধারী ডেভিড বার্গম্যান। নীতি আর নৈতিকতার বালাই নেই, এমন অভিযোগে জাতীয় দৈনিক নিউ এজ এবং অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর থেকে চাকরি খুইয়েছেন বার্গম্যান।
তবুও থামেননি তিনি। ব্লগিং, উন্মুক্ত সম্পাদকীয়- যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছড়িয়েছেন বিষোদগার। দাবি করেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ত্রিশ লাখ নয়, মাত্র তিন লাখ।
বার্গম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অপসাংবাদিকতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করাই তার মূল উদ্দ্যেশ্য। কেননা, বেশিরভাগ লেখাতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার অপচেষ্টা করেছেন। আর যাদেরকে তিনি বাঁচাতে চেয়েছেন, তারা সবাই বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ছিলো পাকিস্তানীদের প্রধান সহযোগী।
বিচারাধীন বিষয়ে বিতর্ক ও উসকানি ছড়ানোর দায়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ইতিহাস বিকৃতির দায়ে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে অভিযুক্ত করে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, টাকা খেয়ে জামায়াত আর বিএনপি লবিকে শক্তিশালী করছেন বার্গম্যান।
অভিযোগ আছে অর্থপাচার আর হত্যা ষড়যন্ত্রের দায়ে সাজা পাওয়া লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের সঙ্গে, জামাতা ডেভিড বার্গম্যানের সহযোগিতাতেই জোট বেঁধেছেন তার শ্বশুর ড. কামাল হোসেন। আরও অভিযোগ, সরকার বিরোধীদের এক মঞ্চে আনার কাজটাও করছেন বার্গম্যান।
একইসঙ্গে ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকেও বিএনপি জামায়াত জোটে ভেড়ানোর মূল হোতা বার্গম্যান, কাজ করছেন ড. কামাল, তারেক রহমান আর এসকে সিনহার লিয়াজোঁ হিসেবে।
কিন্তু সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে, এখন আন্তর্জাতিক মন্ডলে বাংলাদেশ, দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর সশস্ত্রবাহিনীকে জড়িয়ে মিথ্যা-বানোয়াট-গুজব ছড়াচ্ছেন বার্গম্যান।
আল জাজিরার ওয়েবপেইজে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ডেভিড বার্গম্যানের লেখা ৩৫টি প্রতিবেদন রয়েছে যার প্রত্যেকটি নেতিবাচক।
ভোরের পাতা- এনই