
বাংলাদেশের পতাকা যখন বিশ্বের সর্বোচ্চ বিন্দুতে উড়ছে, তখন তা শুধু এক মানুষকে নয় বরং পুরো জাতির সাহস, সংকল্প ও সম্ভাবনার জ্বলন্ত প্রতীকের সাক্ষী দিচ্ছে। এই অনন্য সম্মান বয়ে এনেছেন তরুণ পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। যিনি কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে পদযাত্রা করে মাত্র ৮৪ দিনেই ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছেন। এই অসাধ্য সাধনের অভিযাত্রায় তিনটি নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি। যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘সি টু সামিট’—অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়। আর এর পেছনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রাণ গ্রুপ।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) শাকিল দেশে ফেরার পর সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে প্রাণ গ্রুপ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সেখানে এভারেস্ট জয়ের নেপথ্যের গল্প তুলে ধরেন শাকিল নিজেই।
তিনি বলেন, অনিশ্চয়তার দীর্ঘ পথ, খুম্বু আইসফল, লোৎসে ফেস, সাউথ কল, হিলারি স্টেপ—প্রতিটি ধাপ ছিল একেকটা মানসিক যুদ্ধক্ষেত্র। অক্সিজেনশূন্য উচ্চতায় কৃত্রিম অক্সিজেন মাস্কবদ্ধ মুখে প্রতি মুহূর্তেই মনে হয়েছে—আর পারবো না। কিন্তু ‘সি টু সামিট’ অভিযান সফল করার প্রতিজ্ঞা আর হৃদয়ে লালন করা বাংলাদেশের নাম আমাকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
শাকিল বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা শুধু ক্রিকেট বা ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—তারা পর্বতারোহণসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে, যদি সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং অনুপ্রেরণা মেলে।
তিনি বলেন, চূড়ায় ওঠার মুহূর্তে আবহাওয়া খুব খারাপ ছিল। মাত্র ১০ মিনিট সেখানে অবস্থান করতে পেরেছিলাম। আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আমি সত্যিই এভারেস্ট জয় করেছি। অনেক তরুণ আছেন যারা দেশকে গর্বিত করতে চান, কিন্তু অর্থসংকট তাদের স্বপ্নকে থামিয়ে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হতো যদি প্রাণের মতো সহযোগী না পেতাম।
তার এই অসামান্য অর্জনের পেছনে পরিবারের ভূমিকার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন শাকিল। তিনি বলেন, আমার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। এভারেস্টের যত উচ্চতা, আমার মায়ের সমর্থনও ঠিক ততটাই। বাবা আমার স্বপ্নের প্রতি সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারেননি। আমি ভাগ্যবান, মা আমার এই জয় দেখতে পাচ্ছেন।
শাকিলের মা শিরিন আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় আগ্রহী ছিল শাকিল। ও এভারেস্ট জয় করবে, এটা আমাদের দুজনেরই স্বপ্ন ছিল। আজ সেটা বাস্তব হওয়ায় আমি গর্বিত।
এই অভিযান শুরুর আগে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানি সৈকত থেকে যাত্রা শুরু করেন শাকিল। বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ১৯ মে সকালে এভারেস্টের শিখরে পৌঁছান তিনি। তিনি ভেঙেছেন অস্ট্রেলিয়ান পর্বতারোহী টিম ম্যাককার্টনির ১৯৯০ সালের রেকর্ড। যিনি তিন মাসের বেশি সময় নিয়ে ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে পায়ে হেঁটে এভারেস্টের শীর্ষে উঠেছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, শাকিল বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছে দিয়েছেন। এমন অর্জনের সঙ্গে প্রাণ যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের বিশ্বাস, সঠিক সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের তরুণরা আরও অনেক দুর্দান্ত কাজ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, সেখানে প্রাণের পণ্যের মাধ্যমে মানুষ বাংলাদেশকে চিনছে। এইভাবেই দেশের গৌরব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা।
শাকিলের এ অর্জনের আয়োজক ছিল বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব (বিএমটিসি)। স্ন্যাকস পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল মিস্টার নুডলস। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিব্রাজক ও বিএমটিসির সদস্য অনু তারেক, মিস্টার নুডলসের জেনারেল ম্যানেজার তোষণ পালসহ প্রাণ গ্রুপের অন্য কর্মকর্তারা।