‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই শিরোনামে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাউল সঙ্গীতের সাধুদের জমজমাট মিলন মেলা।
আগামী মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই মেলা বসবে।
এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
বাউল গান বাউল সম্প্রদায়ের সাধনসঙ্গীত। এটি লোকসঙ্গীতের অন্তর্গত। এ গানের উদ্ভব সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না। অনুমান করা হয় যে, খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতক কিংবা তার আগে থেকেই বাংলায় এ গানের প্রচলন ছিল। বাউল গানের প্রবক্তাদের মধ্যে লালন শাহ্,পাঞ্জু শাহ্, সিরাজ শাহ্ এবং দুদ্দু শাহ্ প্রধান। এদের ও অন্যান্য বাউল সাধকের রচিত গান গ্রামাঞ্চলে ‘ভাবগান’ বা ‘ভাবসঙ্গীত’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ এসব গানকে ‘শব্দগান’ও ‘ধুয়া’ গান নামেও অভিহিত করেন।
বাউল গান সাধারণত দুটি ধারায় পরিবেশিত হয় আখড়া আশ্রিত সাধনসঙ্গীত এবং আখড়াবহির্ভূত অনুষ্ঠানভিত্তিক। আখড়া আশ্রিত গানের ঢং ও সুর শান্ত এবং মৃদু তালের। অনেকটা হাম্দ, গজল কিংবা নাত সাদৃশ্য। লালন শাহ্ আখড়ায় বসে ফকিররা এ শ্রেণির গান করে থাকে।
অপর ধারার চর্চা হয় আখড়ার বাইরে অনুষ্ঠানাদিতে, জনসমক্ষে। এ গান চড়া সুরে গীত হয়। সঙ্গে একতারা , ডুগডুগি, খমক, ঢোলক, সারিন্দা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। তাল দাদরা, কাহারবা, কখনও ঝুমুর, একতালা কিংবা ঝাঁপতাল। শিল্পীরা নেচে নেচে গান করে। কখনও গ্রাম এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে বাউল গানের মাধ্যমে তা নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
বাউলরা নিজেদের ভাষায় এ দুটিকে উপর পদ এবং নিচের পদ বলে উল্লেখ করেন। বাউল গানের সুরে কখনও কখনও ভাটিয়ালি সুরের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এর কারণ মাঝিমাল্লারাও অনেক সময় নৌকা বাইতে বাইতে ধীর লয়ে এ গান গেয়ে থাকেন। বাউল গানের বিশেষত্ব এই যে, এ গান কেবল বাউল সাধকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বাউলের সাধন-ভজন জানে না এমন সাধারণ মানুষও অধ্যাত্মরসের কারণে এ গান নিজের করে নিয়েছে।
এটি প্রকৃতি, মানবজীবন, অন্তর্ভুক্তি ও সাম্যের চেতনা প্রকাশ করে, বিভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যের বার্তা দেয়।
মানবিকতা ও ঐক্যের এই শাশ্বত বার্তা সমাজের প্রতিটি হৃদয়ে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ এই সাধু মেলার আয়োজন করেছে। এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।