কলাম জ্যাকেটিং: কলাম বা পিলারকে জ্যাকেট পরিয়ে দেয়ার মতো উপায় এটি। অর্থাৎ পিলারগুলোকে যা আছে তার চেয়ে আরো মোটা করে দেয়া যেন সেটি আরো শক্তিশালী হয়। অনেক সময় বিশেষায়িত উপকরণও দিয়েও এটি করা হয়।
শিয়ার ওয়াল: শিয়ার ওয়ালে পিলারের পাশে আরো রড দিয়ে ঢালাই করে একটি দেয়ালের মতো তোলা হয়। এটি আংশিক হতে পারে (যেমন ছবিতে দ্বিতীয়) অথবা পূর্ণাঙ্গ হতে পারে (যেমন ছবিতে তৃতীয়) তবে ভবনের কোন কোন অংশে করতে এটা করা সম্ভব সেটাও নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
স্টিল ব্রেসিং: এক্ষেত্রে দুই পিলারের মাঝখানে একটি ধাতব ফ্রেম বসানো হয় যেটি ভুমিকম্পের ঝাঁকুনি থেকে পিলারকে রক্ষা করতে পারে। এটি ঠিক ছবির মত না হয়ে কোণাকুণি বরাবরও হতে পারে।
ওয়াল থিকেনিং: এক্ষেত্রে দুই কলামের মাঝের দেয়ালটাকেই মোটা করে ওজন বাড়িয়ে নেয়া হয়। এটিও রড ব্যবহার করে ঢালাইয়ের মত প্রক্রিয়ায় করা হয়।
উন্নত বিশ্বের তিন প্রযুক্তি
টিএমডি (টিউন মাস ড্যাম্পার): এক্ষেত্রে ভবনের ছাদের দিকে বড় আকারের একটি সিস্টেম বসানো হয়। এর ভেতরে তেল বা পানির মতো তরল পদার্থ থাকে। সেটা এমনভাবে করা হয় যেন বসানো সিস্টেমটি নিজে দুলে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি শোষণ করতে পারে। কোনো ক্ষেত্রে এর ভেতরের তরল পদার্থ দুলবে, আবার কোনো ক্ষেত্রে সিস্টেমটাই ডানে-বামে স্লাইড করবে।
আরেকভাবেও এটা করা যায় সেটা পেন্ডুলামের মতো। সেক্ষেত্রে তরল পাদার্থবিশিষ্ট বিশেষ পেন্ডুলামও ঝাঁকির সাথে দুলে ভবনের নড়াচড়া কমাতে পারে।
এটা ভবনের উপরে বিশালাকারের হতে পারে যেমন তাইওয়ানের তাইপেই ওয়ান ও ওয়ান। এটি ১০১ তলা একটি ভবন যেখানে এমন বড় পেন্ডুলাম ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো কোথাও এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি বলে জানান ড. আনসারী।
তবে পেন্ডুলাম আরেকভাবেও ব্যবহার হয় বিমের মাঝে, তবে সেটিকে ঠিক এই টিএমডি প্রযুক্তি না, বরং বেজ আইসোলেটরের মধ্যে ফেলা হয়।
বেজ আইসোলেটর: বেজ আইসোলেটর প্রযুক্তি বসানো হয় ভবনের নিচ দিয়ে যেটি ভবনকে ভিত্তি থেকে আলাদা করে দেয়। এটিকে এমনভাবে সেট করা হবে যেনো ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে নিচের অংশটি নড়বে, কিন্তু উপরের অংশ দুলবে না।
সেটি সহজভাবে বুঝতে ধরুন একটি বাক্সের নিচে এমনভাবে চাকা বা বল বসালেন যেন তার নিচে দুললে চাকাটি এদিক-ওদিক নড়বে, কিন্তু চাকার উপরে বাক্স পর্যন্ত সেই দুলুনি যাবে না।
এটি অনেক ক্ষেত্রে তেলভিত্তিক পেন্ডুলাম দিয়েও করা হয়। উন্নত বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালকে নিরাপদ করতে এটি করা হয়। বাংলাদেশে কোনো ভবনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার না করা হলেও যমুনা ব্রিজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান ড. আনসারী।
বিআরবি (বাকলিং রিস্ট্রেইন্ড ব্রেইস): বিআরবিও একটি অতি ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। সহজে বুঝালে স্টিল ও স্প্রিঙের মতো একটি কাঠামো যেটি সংকোচন-প্রসারণে সক্ষম। ভুমিকম্পে এর ভেতরের স্প্রিং-এর সংকোচন-প্রসারণ হয় এবং সেটি পিলারের উপর চাপ না ফেলে নিজে কাঁপুনি শোষণ করে। এটি সাধারণত আমেরিকা বা চীনে তৈরি হওয়ায় সেখানেই বেশি ব্যবহার হয়।
তবে এসব প্রযুক্তিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এজন্য ভবন তৈরির পরের চেয়ে আগেই মাটি ও ভবন সংক্রান্ত বিষয়ে ভুমিকম্পের দিক বিবেচনা করে ভবন নির্মানটাই বেশি যৌক্তিক। সূত্র: বিবিসি বাংলা