আফ্রিকার নেতাদের এই প্রতিনিধিদলটি তৈরি করা হয়েছে ব্যাপ্তি এবং ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে।
এখানে আছেন আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্তের দেশগুলোর নেতারা - যাদের এই সংকট সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গীও ভিন্ন।
এতে আছেন চারজন প্রেসিডেন্ট, মিশরের প্রধানমন্ত্রী, আর উগান্ডা ও কঙ্গো-ব্রাজাভিলের দু জন প্রতিনিধি।
এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও উগান্ডাকে দেখা হয় রাশিয়ার প্রতি নমনীয় হিসেবে। অন্যদিকে জাম্বিয়া ও কমোরোস হচ্ছে অপেক্ষাকৃত পশ্চিমা-ঘনিষ্ঠ। মিশর, সেনেগাল ও কঙ্গো-ব্রাজাভিল মোটামুটি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েছে।
তবে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু ঘটনাবলী এই উদ্যোগের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
অভিযোগ উঠেছে যে রাশিয়ার যুদ্ধে সমর্থন দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এ কারণে রামাফোসার সরকার এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেন যে দেশটি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং কেপ টাউন বন্দরে গত ডিসেম্বর মাসে একটি রুশ জাহাজে অস্ত্র-গোলাবারুদ ভর্তি করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এখন এ ব্যাপারে প্রিটোরিয়ার সরকারি তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় আছে বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি দ্বি-দলীয় গোষ্ঠী চাইছে যে হোয়াইট হাউস যেন এজন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে শাস্তি দেয় এবং দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা পায় তা পুনর্বিবেচনা করা হয়।
লন্ডনের গবেষণা সংস্থা চ্যাটহ্যাম হাউসের আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক অ্যালেক্স ভাইন বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখন তার নিজের কাজের একটা ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে।
তিনি বলছেন, এতকাল অনেক আফ্রিকান দেশই জোট-নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে আসছিল, এবং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এতকাল মেনে নিয়েছিল যে এর অর্থ মস্কোকে সমর্থন করা নয়।
কিন্তু এখন তারা "প্রকৃত জোট-নিরপেক্ষতা" চাইছে, বলেন মি, ভাইন - "দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর চাপটা এ কারণেই, তাদের এখন প্রমাণ করতে হবে যে তারা সত্যিই জোট-নিরপেক্ষ।"
আগ্রহ দেখাচ্ছে মস্কো ও কিয়েভ উভয়েই
আফ্রিকান শান্তি উদ্যোগ এবং এই সফরের ক্ষেত্রে প্রধান চালিকাশক্তির ভূমিকা নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা।
তিনি পুতিন ও জেলেনস্কির সাথে কথা বলেছেন টেলিফোনে, এ ছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টোনিও গুটেরেসকেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্রিফিং করেছেন।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন এখন পর্যন্ত শান্তি আলোচনার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায়নি, তবে তারা আফ্রিকান নেতাদের এ সফরটির ব্যাপারে আগ্রহী।
মস্কো বেশ কিছুকাল করে আফ্রিকায় তাদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য কাজ করে চলেছে। আগামী মাসে সেন্ট পিটার্সবুর্গে একটি রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে তারা সেটার একটা নমুনা দেখাবে বলে আশা করছে।
ইউক্রেনও আফ্রিকান কূটনীতির ক্ষেত্রে জায়গা করে করে নেবার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা এ মহাদেশে একটি সফর করে এসেছেন।
ড. মাখুবেলা বলছেন, ইউক্রেন সম্ভবত আফ্রিকান মধ্যস্থতাকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করবে যেন তারা সেন্ট পিটার্সবুর্গের সম্মেলনে যোগ না দেন।
তিনি বলেন, রাশিয়ানরা এটা দেখাতে চায় যে তারা বিচ্ছিন্ন নয়। কিন্তু সেন্ট পিটার্সবুর্গে আফ্রিকার রাষ্ট্রপ্রধানরা যাবেন কিনা - এটা তাদেরকে একটা দ্বিধায় ফেলে দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন ওই সম্মেলনটি রাশিয়ার সাথে আফ্রিকার সম্পর্কের একটা গুরুত্বপূর্ণ সূচক, কিন্তু তা আদর্শিক নয়।
ড. ভাইনস বলছেন, আফ্রিকানরা এ ক্ষেত্রে দেনাপাওনায় বিশ্বাসী।
তার মতে, সম্প্রতি মোজাম্বিকের যে সাবেক গেরিলা যোদ্ধাদের সাথে তার কথা হয়েছে - তারা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়েই বেশি চিন্তিত - যার কারণ "বহু দূরের একটি ইউরোপিয়ান যুদ্ধ।"
"এটা তাদের কোন যুদ্ধ নয়"- বলেন ভাইনস।
আফ্রিকান নেতাদের জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এটাকে একটা সুবিধাই বলা যায় - বলছেন মুথিগা।
আসল প্রশ্ন হলো, যাদের মধ্যে এ যুদ্ধ হচ্ছে - সেই রাশিয়া ও ইউক্রেন আদৌ আলোচনার টেবিলে এসে বসবে কিনা। সূত্র: বিবিসি বাংলা