
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ে সেবা নিতে এসে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন মানুষ। এখানে দালাল থেকে শুরু করে কথিত নিয়োগে অঘোষিত কর্মকর্তা সেজে নিয়মিত অফিস করেছেন এমন একাধিক ব্যক্তিরও পরিচয় পাওয়া গেছে। বিআরটিএ অফিসের সীমাহীন অনিয়ম,ঘুষ ও গ্রাহক হয়ারানীর বিষয়টি ময়মনসিংহের সর্বত্রই আলোচিত ও সমালোচিত। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে বেশ কয়েক মাসধরে ব্যপক সমালোচিত বি আরটিএ অফিস।
নানা বিতর্কিত কান্ড ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে বেশ কয়েকজনের অনুরাধে মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে পরিচয় গোপন রেখে গ্রাহক সেজে বি আরটিএ অফিসে যাই। প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে দরজার সামনে ও ভিতরে বেশ কয়েকজন আমার কাছ জানতে চান কেন এসেছি। কি কাজে এসেছি। মনে হ”িছল এরা সবাই দালাল। তাই কারো কথার উত্তর না দিয়ে সোজা চলে যাই অফিসের ভিতরে।
ভিতরে গিয়ে কথা হয় একজনের সাথে। তিনি জানান ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি অল্প জায়গার মধ্যে গাড়ি চালিয়ে পাস করতে হবে। নিয়ম মেনে কন্ট্রাক ছাড়া পাশ করা বা লাইসেন্স পাওয়া খুবই কঠিন। টাকা খরচ বেশী হলেও কন্টাকে দিয়ে দেন সহজেই লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।
এর পুর্বে গত সপ্তাহেও কিভাবে দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যাবে এ নিয়ে কথা বলি অফিসের ভিতরে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসা এম.কামাল উদ্দিনের সাথে। পরে অবশ্য তার পরিচয় জানা যায় তিনি কথিত স্পিড গভর্নর সিল মেকানিক।
জানা যায়, এই অফিসে কামাল উদ্দিনের মত সহকারী সিল মেকানিক বিজন চন্দ্র
সরকারসহ এমন আরও একাধিক ব্যক্তি আছেন যারা কর্মচারী না হয়েও বিআরটিএতে
নিয়মিত অফিস করে যাচ্ছেন। ওই দুই ব্যক্তি সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী না হয়েও বিআরটিএ কার্যালয়ে নিয়মিত অফিস করছেন কিভাবে? তাদের ক্ষমতার উৎস কি? এমন প্রশ্ন সবার। তারাও ফাইলের স্তূপ সামনে নিয়ে অফিস কর্তাদের মতোই নির্দিষ্ট চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউ করতে ২দিনধরে অফিসে আসছেন গফরগাও পৌর শহরের বাসীন্ধা মোস্তফা ড্রাইভার। কে দালাল ও কে কথিত নিয়োগে চাকুরী করেন, কার মাধ্যমে যথাসময়ে লাইসেন্স পাওয়া যাবে এসব নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাই কার কাছে টাকা দিব মনস্থির করতে পাছেননা বলে সাংবাদিক পল্টনকে জানান তিনি।
জানা যায়, অফিসে কর্তারা থাকলেও বিআরটিএ'র অনেক কিছুই চলে কথিত নিয়োগে অফিস করা প্রভাবশালী এই দুই ব্যক্তির কথায়। যখন যে কর্মকর্তা এই অফিসে যোগ দেন, তাদের প্রত্যক্ষ মদদ ও যোগ সাজসে চলেন তারা।
জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে আমি এই অফিসে স্পিড গভর্নর মেকানিক হিসেবে কাজ করছি। অফিস কর্তারাই আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমার মতো বিজন চন্দ্র সরকারও সহকারী স্পিড গভর্নর মেকানিক হিসেবে কাজ করছেন।অফিসে গিয়ে বিজন চন্দ্র সরকারকে পাওয়া যায়নি। তার সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও মোবাইলে কথা বলা সম্ভব
হয়নি।
ভুক্তভোগীসহ সচেতন নাগরিকদের দাবী বিআরটিএ অফিসের দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা জরুরী। সরকারের সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে আবেদন করে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এসবের কোন মিল খোজে পাওয়া যায়নি।
সরকারি বিধি লঙ্ঘনকরে দুই ব্যক্তির কথিত নিয়োগ বিষয়ে জানতে বিআরটিএ ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খবিরুল বলেন, আমি যোগ দেওয়ার আগে থেকেই তারা
এখানে কাজ করছেন। শুনেছি বিজন চন্দ্র কামাল উদ্দিনের লোক। এর বাইরে আমার
কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, তারা আগে থেকেই এই অফিসে কাজ করছেন। তাদের সরকারি কোনো নিয়োগ নেই, তবে কাজ করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানি। বিষয়টি সহকারী পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।