
পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের হোটেল মোটেল জোনে কিছু অসাধু হোটেল কর্তৃপক্ষ প্রতিযোগিতা হারে উঠতি তরুণীদের দিয়ে বডি ম্যাসেজের নামে ভয়াবহ দেহ ব্যবসায় নেমেছে। শুধু তা নয় সমান তালে মরণ নেশা ইয়াবা কারবারও চালিয়ে যাচ্ছে তাঁরা।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১ আগস্ট) এঞ্জেল টাচ থাই স্পাতে আভিযান চালিয়ে ১১ নারী ও ৪জন পুরুষসহ ১৫জন কে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানের পর অন্যান্যগুলো একটু গা ঢাকা দিলেও আড়ালে ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে এ অনৈতিক কর্মকান্ড। যদিও এগুলো পরিচালিত হচ্ছে নারীদের দিয়ে। কিন্তু পর্দার আড়ালে রাগববোয়ালরা। পর্যটন শহরকে অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে মুক্ত করতে এবং এলাকার পরিবেশ ও যুব সমাজকে ওসব অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতে অনুমোদনহীন ও বেআইনী স্পা কেন্দ্র বন্ধে জেলা পুলিশ সুপার ও র্যাব-১৫ জরুরী পদক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বিশেষ করে কলাতলির হোটেল মোটেল জোনে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি নামে বেনামে গড়ে উঠেছে “স্পা”। যার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার নাম ভাাঙ্গিয়ে পরিচালিত, এঞ্জ্যালা টাচ থাই স্পা, লেগুনা বীচ হোটেলে অবস্থিত, নিউ সেভেন এসকে থাই স্পা, রিল্যেক্স থাই স্পা, ওয়েন্ডে ট্যারেস এর ওয়েন্ডে স্পা, এ্যারোমা স্পা, জারা স্পা, মারমেড স্পা, ডিলাক্স স্পা, গোল্ডেন স্পা, চায়না রোজ স্পা, সী-প্রিন্সেস থাই স্পা, ওশান প্যারেডাইস ও সায়মন বীচ এ স্পা পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো বিভিন্ন প্রশাসনের কতিপয় অসুধু ব্যক্তি ও কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এ সমস্থ স্পা কেন্দ্র গুলো বিভিন্ন গেস্ট হাউস ও অভিজাত হোটেলে মাসিক রুম ভাড়া নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। আর ভিন্ন ভিন্ন কলা কৌশলে সুন্দরী নারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেরা আর বিদেশী কিছু পর্যটক এবং এনজিওতে কাজ করা কর্মকর্তারা মূলতা এর মূল কাস্টমার। বিভিন্ন আইটেমের দাম বিভিন্ন রকম। ফুল বডি ম্যাসেজ ঘন্টায় ২০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত মুল্য নির্ধারন আছে। প্রতিটি স্পা কেন্দ্রে রাখাইনসহ ১০/১৫ জন সুন্দরী নারী থাকে। আপনি চাইলে সেখান থেকে যে কোন পছন্দ মত নারীকে নিয়ে ম্যাসেজ করাতে পারেন। সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব স্পা কেন্দ্রগুলো খোলা থাকে বলে জানান তারা। ইচ্ছে হলে পারেন টাকার বিনিময়ে ভোগ করতে। এছাড়া জানান রাতে বসে মাদকের আসরও।
এদিকে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করতে আর সামাজিক নৈতিকতাকে লুপ্ত করতে শুরু হয়েছে আরও একটি ব্যবসা যার নাম “স্প”া যা সাধারনতা ভদ্র সমাজে ম্যাসেজ করাকে চিহ্নিত করে। আর এ স্পা ব্যবসার আড়ালে যে হারে বেড়েছে যৌনতা ও দেহ ব্যবসা তার দিকে খেয়াল নেই অনেকরে এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। নিবন্ধন বিহীন আর উচ্চ মুল্যের এ ব্যবসার কোন আয়কর ও ভ্যাট দিচ্ছেনা ওসব ব্যবসায়ী। শুধু নাম মাত্র বৈধ ব্যবসার নাম দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে এ অসমাজিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কে পুঁজি করে দেশী বিদেশী পর্যটকদের ঘিরে গড়ে তুলেছে এ ম্যাসেজের নামে যৌনতা আর দেহ ব্যবসা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোটেল মোটেল জোনের অলিতে গলিতে এ স্পা গুলোর বিজ্ঞাপনের প্লে কার্ড শোভা পাচ্ছে। স্থানিয়রা জানান, শহরের হোটেল মোটেল জোন এলাকায় শুধু তাদের এ ব্যবসা। পর্যটন কেন্দ্রীক এ ব্যবসায় সুন্দরী নারীদের দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুন্দরী নারীদের এনে আর কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রীরা এসব কাজে জড়িত বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। যদিও এগুলো পরিচালিত হচ্ছে নারীদের দিয়ে। কিন্তু পর্দার আড়ালে রয়েছে রাগববোয়ালরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেল মোটেল জোনের অধিকাংশ লোকজন জানান, “স্পা নামক এ ব্যবসা হলো অভিজাত পতিতা ব্যবসা। বডি ম্যাসেজের নামে অবাদ যৌনতা। তারা ব্যবহার করে সুন্দরী নারীদের। এছাড়া সমান তালে চলে ইয়াবা কারবারও”। এ ব্যবসাগুলো বন্ধে প্রশাসনের নিয়মিত টহল জোরদারের দাবী জানান তাঁরা।
সুশিল সমাজের প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন রহমান পিয়ারু বলেন, “মুলতঃ স্পা ব্যবসার নামে অভিজাত পতিতা ব্যবসা চলছে বলে আমিও শুনেছি। যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে এ ব্যবসা বন্ধ হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য দাবী জানাচ্ছি”।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্যানাটারি ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আলম জানান, “যদি সরকার অনুমোদিত হলেও প্রত্যেক “স্পা” কর্মী থেকে প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য পরিক্ষার সনদ দরকার। কক্সবাজারে এ পর্যন্ত কোন “স্পা” সেন্টার থেকে কেউ স্বাস্থ্য সনদ এর জন্য আসেনি”।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আবু মোঃ শাহজাহান কবির বলেন, “আমি নতুন মাত্র যোগদান করেছি। এধরনের ব্যবসা চালালে আমরা অভিযানের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেব। পর্যটন শহরে কোন ভাবেই অনৈতিক কাজ হতে দেবনা”।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, “অবৈধ স্পা সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ অভিযান শুরু হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ওসব অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে”
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, “আমাকে তালিকা দিন। আমি ওই তালিকা এসপিকে দিয়ে অভিযান চালানোর ব্যবস্থা করতেছি”।