
যাত্রা শুরু করলো ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে স্থাপিত ‘আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা টিটিসি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ২৪টি টিটিসির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ‘আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)’সহ ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নবনির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণগুলোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সকল উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বিদেশ থেকে অর্থ হুন্ডি না করে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে শুধু রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর না করে বহুমুখি পণ্যের রপ্তানীর দিকে নজর দিতে হবে। ভোগ্যপণ্যে পরনির্ভরশীলতা কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দিতে হবে। এছাড়া বিদেশে যে সব এলাকায় বাংলাদেশী কর্মীরা কাজ করেন তাদের দেখভালের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশে যেসব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে একটি। প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধনের পর আলফাডাঙ্গাসহ গোটা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি এই এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। টিটিসির সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানীয়দের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা। ৭২ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই টিটিসিতে প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী কর্মীদের তিনদিনের প্রশিক্ষণ (পিডিও) কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি। আলফাডাঙ্গাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে উপজেলার মধ্যে সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মরহুম কাঞ্চন মুন্সী। এছাড়াও কামারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ঈদগাহ, কবরস্থান, খেলার মাঠ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা কাঞ্চন মুন্সীর দান করা জায়গায় স্থাপিত হয়েছে। কাঞ্চন মুন্সী শুধু নিজ গ্রামেই নয়, আশপাশের শত শত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। তারই সুসন্তান মরহুম মুন্সী বজলার রহমান কাঞ্চন একাডেমিকে ৯০ শতাংশেরও বেশি জমি দান করেছিলেন। কাঞ্চন একাডেমির সেই জায়গায় নির্মিত হয়েছে টিটিসি।
সূত্র বলছে, আলফাডাঙ্গার উন্নয়নে মুন্সী পরিবারের অবদান মানুষের মুখে মুখে। এই পরিবারের সুযোগ্য উত্তরসূরি কাঞ্চন মুন্সীর প্রপৌত্র আরিফুর রহমান দোলনের চেষ্টায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দিরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনও হচ্ছে। আরিফুর রহমান দোলন এলাকার সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ও এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে প্রপিতামহের নামে প্রতিষ্ঠা করেন সমাজসেবামূলক সংস্থা ‘কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন’। তার একান্ত প্রচেষ্টায় আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিও স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করে প্রতিষ্ঠানটি কামারগ্রামে এনেছেন।