প্রকাশ: রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:২৩ পিএম

ফেসবুকে পরিচয় এবং পরে বিয়ে হয় শান্তা ইসলামের। এরপরেই নেমে আসে দুর্বিসহ জীবন। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দ্বারা নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন শান্তা।
রোববার সাভারের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শান্তা ইসলাম বলেন, যৌতুকের জন্য শ^শুর বাড়ীর লোকজন আমাকে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও শরীরের গরম পানি ঢেলে দেয় এবং গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। মৃত ভেবে তারা আমাকে সড়কে ফেলে দেয়। পরে এলাকাবাসী আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আমি কিছুটা সুস্থ হয়ে থানায় মামলা করলে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। স্বামী ও তার পরিবার দু’বার আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করেছে। আদালত থেকে ফেরার পথে আমাকে চলন্ত বাসের মধ্যে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
জানা গেছে, যশোরের ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর খলিফাপাড়ার কাবুল মিয়ার কন্যা শান্তা ইসলাম (২২)। ২০১৯ সালে সাভার পৌর সভার গেন্ডার সচিব রোড মহল্লার বাসিন্দা স্বামী জহিরুল ইসলাম সাগরের সাথে তার প্রথমে ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেম হয়। মিথ্যা আশ^াস ও পরিচয়ে তার সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে কাজী অফিসে নিয়ে ১০ লক্ষ টাকা দেন মোহরে বিয়ে করেন। একই দিন পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজধানীর মহাখালীতে আরেক কাজী অফিসে নিয়ে ১ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধরে পুনরায় বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের পর স্বামী তাকে ঘরে তুলতে না চাইলে তার বাড়ীর সামনে পরপর ৩ দিন অনশনে বসেন শান্তা ইসলাম। পরবর্তীতে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আয়নাল হক গেদুর অফিসে শালিশ বৈঠকে বিষয়টি মিমাংসা হয়। মিমাংসায় শান্তাকে ঘরে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেন সাগরের পরিবার। কিন্তু নিজ বাসায় না তুলে স্ত্রীকে নিয়ে সাগর ধামরাইয়ে ভাড়া বাসায় উঠেন।
শান্তা ইসলাম বলেন, তিনি ধামরাইয়ের স্নোটেক্স গার্মেন্টস কারখানায় চাকুরি নেন আর সাগর বাসে কন্ট্রাকটারি করেন। এদিকে একটি যাত্রীবাহী বাস ক্রয়ের জন্য সাগর ও তার পরিবার শান্তার নিকট যৌতুক ও বাসের শেয়ার হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বাবার বাড়ী ও আত্মীয় স্বজনদের নিকট হতে ১১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা এনে দেন। ওই টাকায় ক্রয় করা বাস সেলফি পরিবহন (ঢাকা মেট্রো ব-১৩-১৭৪৭) ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচল করে। কিন্তু শেয়ার হিসেবে তাকে যে টাকা দেয়ার কথা তা কখনই দেয়নি সাগরের পরিবার। এ ছাড়া ধামরাইয়ের বাসায় এক বছরে তিনি দুইবার গর্ভবতী হন। দুইবারই তাকে স্বামী ও শশুরবাড়ীর লোকজন জোরপূর্বক গর্ভপাত করান। এ নিয়ে কথা বললে প্রায়ই তাকে প্রচন্ড মারধর করে অচেতন করে ফেলা হতো।
সংবাদ সম্মেলনে শান্তা ইসলাম জানান, গত ১২ ডিসেম্বর রাতে মিমাংসার কথা বলে ধামরাই হতে তাকে শ^শুর বাড়ীর লোকজন সাভারে স্বামীর বাড়ীতে নিয়ে আসেন। এ রাতে তাকে মেরে ফেলার জন্য শরীরে গরমপানি ও গায়ে সিগারেটের আগুন দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় এবং মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়। মৃত ভেবে তাকে সড়কে ফেলে রাখা হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের সহায়তায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলার আসামী সাগরের পিতা নজরুল ইসলাম ও মা খুরশিদা বেগমকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। তার শ^শুর-শাশুড়ি গ্রেফতার হওয়ার পর তার স্বামী ও ভাসুরসহ মামলার অন্য আসামীগন তাকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করে। মামলা না তুললে হত্যার হুমকি প্রদান করে।
গৃহবধু শান্তা ইসলাম সাংবাদিক সম্মেলনে আরও জানান, স্বামীর পরিবারের পক্ষ হতে তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় নির্যাতিতা গৃহবধূ শান্তার সাথে ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক মাজহারুল ইসলাম খোকন।