
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহ পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা।
ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, রোজা শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে দিনের পুরো সময় খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, যৌনাচার না করা এবং নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব ও প্রসবকালীন স্রাবমুক্ত থাকা রোজার শুদ্ধতার জন্য অপরিহার্য। এছাড়া মানসিকভাবে সুস্থ হওয়াও একটি শর্ত।
তবে রোজার শুদ্ধতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারাবির নামাজ আদায় করা কোনো শর্ত নয়। কারণ, তারাবি নামাজ রমজান মাসের একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এটি রোজার ফরজ বিধানের অন্তর্ভুক্ত নয়।
রোজা হলো ফরজ ইবাদত, আর তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যদিও দুটির সময়কাল রমজানের মধ্যেই পড়ে, তবে একটির শুদ্ধতা অন্যটির ওপর নির্ভরশীল নয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা রোজা রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের মানুষের জন্য ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)
এটিই রোজার আবশ্যকতার মূল বিধান। এখানে তারাবির নামাজ আদায় করার কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তাই রোজা শুদ্ধ হওয়ার জন্য তারাবির নামাজ আদায় করা জরুরি নয়।
যদিও তারাবি রোজার শুদ্ধতার শর্ত নয়, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোনো বৈধ কারণ ছাড়া তারাবি পরিত্যাগ করা উচিত নয়। পুরুষদের জন্য জামাতে তারাবি আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া, অর্থাৎ মহল্লার কিছু লোক জামাতে আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হবে, অন্যথায় সবাই গুনাহগার হবেন। তবে কেউ চাইলে একাকীও তারাবি পড়তে পারেন, সেক্ষেত্রেও তা শুদ্ধ হবে।
শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁর এক বক্তব্যে বলেছেন, তারাবি নামাজ না পড়লেও রোজা সহীহ হবে। কারণ, রোজা ও তারাবি দুটি ভিন্ন ইবাদত। রোজা ফরজ ইবাদত, যা প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের ওপর বাধ্যতামূলক। পক্ষান্তরে, তারাবি সুন্নতে মুআক্কাদা, যা পড়লে মহান সওয়াব পাওয়া যায়, কিন্তু না পড়লে রোজার উপর কোনো প্রভাব পড়ে না।
তবে তিনি আরও বলেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে তারাবি পরিত্যাগ করেন, তারা সুন্নত পরিত্যাগের কারণে বঞ্চিত হবেন। তারাবি পড়লে যেমন সওয়াব বাড়ে, তেমনি না পড়লে সে সুযোগ হাতছাড়া হয়।
রমজান মাসের ইবাদতগুলো আলাদা হলেও প্রতিটির গুরুত্ব রয়েছে। তাই রোজার পাশাপাশি তারাবির নামাজ আদায় করাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
তারাবি নামাজ না পড়লে রোজা বাতিল হয় না বা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে তারাবি পড়ার মাধ্যমে রমজানের বরকত ও রহমত পাওয়া সহজ হয়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তারাবি নামাজ গুরুত্বসহকারে আদায় করা।
শায়খ আহমাদুল্লাহর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যারা না পড়েন, তারা গুনাহগার না হলেও, অনেক সওয়াবের সুযোগ হারাবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজা ও তারাবির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।