মাহফিলে আয়নাঘরের বর্ণনা দেয়ায় মাইক বন্ধ করলো মোংলা বন্দর ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক

রামপালের ঝনঝনিয়ায় এক ওয়াজ মাহফিলে আয়নাঘর ও ফ্যাসিস্ট বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মোংলা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক শাহিনুর রহমান বক্তার মাইক বন্ধ করে বক্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোংলা বন্দরে ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ওই কর্মকর্তা বন্দর এলাকায় শ্রমিকলীগ নেতা শেখ শাহিনুর রহমান নামে পরিচিত।
গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় ঝনঝনিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত এক ওয়াজ মাহফিলে বক্তার বক্তব্যে বিরোধিতা করে বক্তার মুখ থেকে মাইক কেড়ে নেন বলে অভিযোগ করেন উপস্থিত মুসল্লিরা।
এতে স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে চড়াও হয় এবং শেখ শাহিনুর রহমানের শান্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে মাহফিল মাঠে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে শ্লোগান দেন।
শাহিনুর রহমান রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আ. হামিদের ছেলে। সে বর্তমানে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের এডহক কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ঘটনায় ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে কর্মচারী সংঘের সদস্যরা জরুরি সভা করে তাকে এডহক কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে প্রত্যাহার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঝনঝনিয়া গ্রামে আলহাজ্ব লায়লা বেগম জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় শেখ শাহিনুর রহমান মাহফিলের মাঠে উপস্থিত ছিলেন। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার একটি মাদরাসার জনৈক প্রধান বক্তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন বিষয়ের ফ্যাসিস্ট ও আয়নাঘরের ভয়াবহতার উদাহরণ তুলে ধরে বক্তব্য রাখছিলেন। এমন সময় শাহিনুর রহমান হঠাৎ স্টেজে উঠে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে বক্তাকে অনেক বকাঝকা করেন এবং এমন ধরনের বক্তব্য দেয়ার জন্য হুমকিও দেন বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।
শাহিনুর রহমান আরো বলেন, আমি এই মাহফিলে উপস্থিত আছি, তাই এখানে রাজনৈতিক বা সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না। দেশে কোনো আয়নাঘর নেই, কোনো ফ্যাসিস্টও নেই। এমন কথা শুনে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে চলমান ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্য বাধাগ্রস্ত করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে বলে মুসল্লিরা ক্ষীপ্ত হয়।
ওয়াজ-মাহফিলে বাধা দেয়ার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানের তীব্র প্রতিবাদ করেন। পরে মুসল্লিরা শাহিনুর রহমানকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়।
এ ঘটনার পর পরই উম্মুক্ত মাহফিলে বক্তাকে শাহিনুরের হুমকির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এতে প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্র-জনতা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। খবর পেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের অন্যান্য সদস্য এক জরুরি সভা বসিয়ে শাহিনুর রহমানকে এডহক কমিটির আহ্বায়কের পদ থেকে প্রত্যাহার করেন।
উল্লেখ, ইতোপূর্বে শাহিনুরের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী মীরা বেগমকে নির্মমভাবে পিটিয় হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গত দুই বছর আগে কোরবানির ঈদে মাংস নিয়ে বিরোধের কারণে স্ত্রী মিরাকে বেদমভাবে মারপিট করেন তিনি। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে দ্রুত রাত ১১টায় ঝনঝনিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীরাকে মৃত ঘোষণা করেন। নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসক জানান, শাহিন মীরাকে ভ্যানে করে নিয়ে এসে বলেন স্ট্রোক করেছে। কিন্তু তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সূত্র জানায়, শাহিনুর রহমান তড়িঘড়ি করে পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে দাফন সম্পন্ন করেন বলে বহু অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনা নিয়ে সাংবাদকর্মীরা রিপোর্ট করলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। হত্যার ঘটনাটি তৎকালীন রামপাল থানা পুলিশ ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়ের তালুকদার আ. খালেক ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহলের চাপে পড়ে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। তবে নৃশংস ওই হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা ও ঢাকা সিআইডিতে কর্মরত শাহিনের আত্মীয় এতে বাধা সৃষ্টি করছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে এমন ঘটনায় শাহিনুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ শাহিনের সাথে তার ব্যবহৃত ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে রবিবার এ ঘটনা নিয়ে মোংলা বন্দর ও বন্দরের কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা গেছে। মোংলা-রামপালের সচেতনমহল শাহিনের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড ও তার স্ত্রীর হত্যার রহস্য উন্মোচনসহ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় এডহক কমিটির অন্যতম সদস্য মতিয়ার রহমান শাকিব বলেন, ঝনঝনিয়া গ্রামে চলমান ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্য বাধাগ্রস্ত করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের এডহক কমিটির আহ্বায়ক শেখ সাহিনুর রহমান। আর সেই ওয়াজ-মাহফিলে বাধা দেয়ার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। ওখানকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের এডহক কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছি এবং বিষয়টি নিয়ে আমাদের অভিভাবক বন্দর চেয়ারম্যান স্যার যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।