শুনিল কুমার। বাবা আর মা মাবধী রানীকে নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের তেলুগু সুইপার কলোনিতে বসবাস। কলোনির ছোট্ট একটি কক্ষে তারা নিদারুণ কষ্টে করছেন দিনাতিপাত।
গত কদিন সুইপার কলোনিতে মাধবী রানীর সাথে কথা হচ্ছিল এই প্রতিবেদকের। ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ৮টা ৩০ মিনিট। আগের দিনের ব্যবহৃত তৈজসপত্র পরিষ্কার করতে করতে মাধবী রানী জানালেন তার পহাড়সম ক্ষোভের কথা।
বললেন, দুই বছর হতে চললো তার ছেলে শুনিল পরিছন্নতা কর্মীর কাজ করছেন কাজলা এলাকায়। কিন্তু এখনো পাননি বাসা বরাদ্দ। মাত্র ১০০ বর্গফুটের একটি কক্ষে ছেলে, স্বামী আর ছেলের বউ নিয়ে অতিকষ্টে দিন পার করছেন।
পরিছন্নতা কর্মীদের ভবন প্রভাবশালী বহিরাগতদের দখলে। একটি চক্রের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঘর বরাদ্দের নামে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। ঘর বরাদ্দ পায়নি প্রকৃত ভুক্তভোগীরা। তাদের ঠিকানা সুযোগ-সুবিধাহীন কলোনির ওই ছোট্ট ঘরে।
ভোরের পাতার দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
অনুসন্ধান বলছে, শুধু শুনিলের পরিবার নয়, একই অবস্থায় বসবাস করেন হরিজন সম্প্রদায়ের হাজারো পরিবার। সুযোগ-সুবিধাহীন স্বল্প পরিসরের টিন-কাঠ দিয়ে তৈরি এসব খুপরিতেই কাটছে তাদের কয়েক প্রজন্ম। তাও আবার সিটি কর্পোরেশনের দখল তালিকায় হয় উচ্ছেদ। তাতেও মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয় অনেকে।
অনুসন্ধানের এক প্রহরে পরিচয় গোপন করে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিছন্নতা কর্মী ইউনিয়নের এক সিবিএ নেতা ও আরেক কর্মকর্তা মিলে ফ্ল্যাট বরাদ্দ সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে কাজ করছেন। নগর প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে চলছে পরিছন্নতা কর্মীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের নামে এই তুঘলকি কাণ্ড। দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন নগর প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। কোনো এক রহস্যময় কারণে নিশ্চুপ ঊর্ধ্বতনরাও।
এ বিষয়ে সরাসরি কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কর্মকর্তা (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ) এয়ার কমডোর মাহাবুবুর রহমান তালুকদারের সাথে। বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সিবিএ নেতা হোক আর যেই হোক, নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
অপরদিকে, ভোরের পাতার পক্ষ থেকে দক্ষিণ সিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হয় প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীর সাথে। কিন্তু কোনো এক রহস্যময় কারণে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন এই কর্মকর্তা। কথা বলতে বললেন যান্ত্রিক বিভাগের প্রধানের সাথে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে সাড়ে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত ১ হাজার ১৪৮টি পরিছন্নতা কর্মী পরিবারের আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে ঢাকার ধলপুরে পাঁচটি ১০তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ।