প্রকাশ: শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:৪০ পিএম

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়নের পদ্মার তীর ঘেষা পদ্মার চরে গড়ে তোলা হয়েছে মা ইলিশের হাট। ইউনিয়নটির স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোর্সেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলমের ছত্র-ছাঁয়ায় চরে বিকিকিনি হচ্ছে ইলিশ মাছ। দুর্গম চর হওয়ায় এলাকার নারী-পুরুষরা ইলিশ কিনে আনছেন। বিশেষ করে ভোর রাতের সময় এসব ইলিশ বহণ করাটা নিরাপদ বলে চরে মানুষের সমাগম হচ্ছে।
অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়েও অসাধু জেলে সিন্ডিকেটের সাথে পেরে উঠা যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার ফলে দুর্গম চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেলের ধরা যাচ্ছেনা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জেলেরা চরের পাশে বিভিন্ন ঘণকাশ বনের জঙ্গলে পালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে বাঘড়া বাজার সংলগ্ন পদ্মা নদীর চরসহ ওই এলাকার নিকারী বাড়ি ও ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কেদারপুর, কামারগাঁও, মান্দ্রা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে।
বিশেষ করে লোক চক্ষুর আড়ালে কিছু কিছু জেলে ককশেডের বাক্সে ইলিশ মজুদ করে খুচরাভাবে বিক্রি করছে। মাঝে মধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করতেও দেখা গেছে। তার পরেও অসাধু মৌসুমী এসব জেলেদের দৌরাত্ব থামছে না। বাঘড়ার চরে একের পর এক ট্রলার ও নৌকা এসে ভিড়ছে। সেখান থেকে ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে তুলে আনা হচ্ছে ইলিশ। সংরক্ষনের জন্য রাখা হয়েছে বরফ ও ককশিটের বাক্স।
সেখান থেকে ক্রেতারা মাছ বোঝাই ককশিটের বাক্স নিয়ে ট্রলারে করে বাঘড়া বাজারের সামনে এসে নেমে এদিক সেদিক চলে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঘড়া চরে ইলিশের এই হাট পরিচালনা করছেন বাঘড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলম। এলাকায় তারা প্রভাবশালী হওয়ায় জেলে সিন্ডিকেট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ কেনাবেচা করতে সাহস পাচ্ছে। বাঘড়া বাজার সংলগ্ন চরের খেয়া ঘাটটিও রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে। খেয়া ঘাটের নৌকায় করেই শতশত মানুষ চর থেকে ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এটা এলাকার সকলেই অবগত, কিন্তু প্রকাশ্যে একথা কেউ স্বীকার করবেন না। মো. আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঘড়া বাজার ঘাটে তিনি মৎস্য আড়তের ব্যবসা করেন। আড়তে ব্যবসা করলেও নিষেধাজ্ঞা কালীন সময় ইলিশ কেনাবেচা করছেন না। তিনি দাবী করেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। মো. মোর্শেদ বলেন, ইলিশ বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২ অক্টোবর থেকে নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও পদ্মা নদীর এই পয়েন্টের চিত্র ভিন্ন। দুর্গম পদ্মার চর হওয়ায় এখানে মা ইলিশ ধরা ও কেনা বেঁচা হচ্ছে। এখানে গত বছর অভিযানের সময় ইলিশ মাছ বাণিজ্য সিন্ডিকেট দোহার থানা পুলিশের উপর হামলা করে।
এই স্থানটি শ্রীনগর উপজেলা, মাদারীপুরের শিবচর, ও ঢাকার দোহার উপজেলার সীমানাবর্তী হওয়ায় অভিযান কারা পরিচালনা করবেন তা নিয়েও রয়েছে টানা হেঁচরা। শ্রীনগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার বসাক বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল কম আমাদের তারপরও প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মা ইলিশ রক্ষা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেস্টা করে যাচ্ছি। আগামী ৩ নভেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।