
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের একের পর এক অস্ত্র চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কৌশলগত ভারসাম্য এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারসহ একাধিক দেশ নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্প লাভবান হচ্ছে, তেমনি ইসরায়েলের ‘গুণগত সামরিক সুবিধা’ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নতুন মাত্রা পাচ্ছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক জনাথন ব্লুম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু অস্ত্রই বিক্রি করছে না, এটা তার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এক মোক্ষম কৌশল।
২০২৫ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা অঞ্চলটিতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের চুক্তি। চুক্তির আওতায় রয়েছে: সি‑১৩০জে পরিবহন বিমান, প্রেটরিয়েট ও থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এমকিউ‑৯বি সি গার্ডিয়ান ড্রোন, এমরাম(এআইএম‑১২০সি‑৮) ক্ষেপণাস্ত্র, এপিকেডাব্লিউএস গাইডেড রকেট, স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যানবাহন ও উন্নত রাডার সিস্টেম।
তবে এফ‑৩৫ স্টেলথ জেট সরবরাহ ইস্যুতে এখনো জটিলতা রয়েছে, কারণ ইসরায়েলের ‘প্রযুক্তিগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখার মার্কিন নীতির সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক হতে পারে।
চলতি বছরের জুন মাসে কাতার ও ইউএই-এর জন্য আরও দুটি বড় সামরিক চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কাতারের সঙ্গে ১.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তির আওতায় রয়েছে: এমকিউ‑৯বি ড্রোন, সেন্সর, জেডিএএম কিট।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ১.৬ ডলারের সামরিক চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তির আওতায় রয়েছে: সিএইচ‑৪৭ এফ চিনক হেলিকপ্টার, এফ‑১৬ যন্ত্রাংশ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী। এ ছাড়াও ২০২১ সালের থমকে যাওয়া ২৩ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সে চুক্তির আওতায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এমকিউ‑৯বি ড্রোন কিনতে সম্মতি জানিয়েছিল আরব আমিরাত।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে এই চুক্তিগুলো ৫৬-৩৯ ভোটে পাস হয়। যদিও কিছু ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এই বিক্রির বিরোধিতা করেছে।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে ইউএসএস নিমিটজ এবং ইউএসএস কার্ল ভিনসন এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার মোতায়েন করেছে মার্কিন নৌবাহিনী। পাশাপাশি প্রেটরিয়েট ও থাড সিস্টেমের নতুন ইউনিট মোতায়েন করেছে যা মধ্যপ্রাচ্যেও উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়েছে।