দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক গত সোমবার আদালতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) এক সময়ের প্রধান মজিবুর ও তার স্ত্রী তাসরিনের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদনটি করেন।
এ আবেদনে ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি ছাড়াও তাদের ১৬টি ব্যাংক হিসাবে ‘কোটি কোটি টাকা লেনদেনের’ তথ্য পাওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে বলে বলেছেন দুদকের এক কর্মকর্তা। তাদের নামে সঞ্চয়পত্র ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তথ্যও রয়েছে।
বরখাস্ত হওয়ার আগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমান আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি ছিলেন। তিনি এক সময় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক ছিলেন, যেটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বিষয়াদি দেখভাল করে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত মজিবুর-তাসরিন দম্পতির নামে ঢাকার মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল এলাকায় অন্তত ১০টি প্লটের প্লটের খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি আবাসিক ভবন এবং ঢাকার সাভারে একটি জমিসহ টিনশেড বাড়ি রয়েছে। এছাড়া মিরপুর ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে মজিবুরের নামে একটি ফ্ল্যাট, দুটি বাড়ি ও তিনটি প্লট রয়েছে। আর তাসরিনের নামে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট ও সাতটি প্লট।
গত বছর ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক মাস পর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১০ সেপ্টেম্বর মজিবুর রহমানকে বরখাস্ত করার আদেশ জারি করে।
আর্টডকে দায়িত্ব পাওয়ার আগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমান ছিলেন সেনা সদরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি)।
হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে আলোচনায় আসা এই সেনা কর্মকর্তা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালকও ছিলেন।
পরে তাকে এসএসএফের মহাপরিচালক করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সময় তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।
দুদকের ওই কর্মকর্তা বলছেন, মজিবুরের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ’ করার অভিযোগ রয়েছে।
মজিবুর ও তার স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ‘দুর্নীতি-ঘুষের’ বিপুল পরিমাণ টাকা জমা ও উত্তোলনের তথ্যও পাওয়ার তথ্যও দিয়েছে দুদক।
আদালতে করা আবেদনে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বলেছেন, “মজিবুর রহমান, তার স্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা এবং তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
“যদি এসব সম্পদ ক্রোক বা ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ না করা হয়, তাহলে বিচার কার্যক্রম চলাকালে রাষ্ট্র এগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না, ফলে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।”
স্ত্রীর নামে সাত প্লট ও এক ফ্ল্যাট
মজিবুর রহমানের স্ত্রী তাসরিনের নামে সাতটি প্লট রয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাউনিয়া এলাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্লটটি সাড়ে ৭ কাঠার। যার মৌজা মূল্য দেখানো হয়েছে ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া তাসরিনের নামে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জোয়ার সাহারা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
মজিবুরের সম্পদ
মিরপুরের মাটিকাটা এলাকায় মজিবুর রহমানের নামে ৪ হাজার ৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনি এই ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তার নামে মিরপুরের মাটিকাটা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জোয়ার সাহারা ও খিলক্ষেত এলাকায় তিনটি প্লট রয়েছে। তার সবচেয়ে বড় সাড়ে ৭ কাঠার প্লট রয়েছে খিলক্ষেত এলাকায়। এ প্লটের মৌজা মূল্য দেখিয়েছেন ৬৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা।
প্লটের বাইরে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় তার নামে একটি প্লটসহ বাড়ি রয়েছে। এছাড়া সাভারে ৫ শতাংশ জায়গার ওপর টিনশেড বাড়ির তথ্যও পেয়েছে দুদক।
এছাড়া, মজিবুরের মালিকানায় একটি টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়িও রয়েছে, যার মূল্য ৪৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে, সেটিও দুদক জব্দ করতে চায়।