
অভিনব কৌশলে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া 'ম্যাগনেটিক কয়েন' প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আদাবর থানা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ইফতেখার আহম্মেদ (৪৪), আবু নাঈম মো. ফাইজানুল হক ওরফে ডক্টর নাঈম (৪৮), মো. আব্দুল হালিম তালুকদার কুরাইশি (৪২) ও আবুল কালাম আজাদ (৪৬)।
গত শুক্রবার (২১ মার্চ) দিবাগত রাত ১২:১০ থেকে সকাল ৭:০০ পর্যন্ত আদাবরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি 'এন্টিক মেটাল কয়েন', ৫০ লক্ষ টাকার ব্যাংক চেক, নগদ ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতারণার কৌশল
আদাবর থানা সূত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি ভিকটিম মিজানুর রহমানকে 'এন্টিক মেটাল কয়েন' বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।
প্রায় আট মাস আগে ইফতেখার আহম্মেদের সঙ্গে মিজানুর রহমানের পরিচয় হয়। সে দাবি করে, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই কয়েনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব। এরপর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের একটি হোটেলে বৈঠকের আয়োজন করা হয়, যেখানে আবু নাঈম মো. ফাইজানুল হক নিজেকে বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধি পরিচয় দেয় এবং মো. আব্দুল হালিম তালুকদার কুরাইশিকে 'কেমিস্ট' হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
প্রতারকরা কয়েনগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে ভিকটিমকে আশ্বাস দেয়। তারা ভুয়া পরীক্ষার মাধ্যমে কয়েনগুলোর সঠিকতা নিশ্চিত করে একটি রিপোর্টও প্রদান করে।
এরপর ২৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে মিজানুর রহমান প্রতারকদের কাছে অগ্রিম ৪৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। পর্যায়ক্রমে আরও ৭৫ লাখ টাকা নগদ এবং ৫০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন, কয়েনগুলো ভুয়া এবং তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
অভিযান ও গ্রেফতার
প্রতারিত হওয়ার পর মিজানুর রহমান আদাবর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে এবং তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে 'ম্যাগনেটিক কয়েন' ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে এভাবে প্রতারণা করে আসছে। তারা আরও কয়েকজনকে একই কৌশলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করছিল বলে স্বীকার করেছে।
তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।