মো. সাজেদুল হক সাজু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আখচাষীরা ভারতীয় নিম্নমানের চিনিসহ বিভিন্ন ক্যামিক্যাল ব্যাবহার করে গুড় তৈরি করছেন। এতে গুড়ের রং আকর্ষণীয় হচ্ছে। ক্রেতা সাধারণ হাটে বাজারে কোন কিছু না বুঝে দেদারসে কিনছেন এসব ভেজাল গুড়। ব্যবসায়ীগন এসব গুড় কিনে অন্যন্য জেলায় বিক্রির উদ্দেশ্যে ট্রাকযোগে পাঠাচ্ছেন।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গুড়ের চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এ সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় গুড় প্রস্তুত কারক চাষিরা ভারতীয় নিম্নমানের চিনি হাইড্রোজসহ বিভিন্ন ক্যামিক্যাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন। উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিজান চালিয়ে শেষ করছেন তাঁদের কার্যক্রম।
জেলায় সবচেয়ে বেশি আখ উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলার পুঁটিমারি বিল, নাককাটিতলা ও ধাইনগর এলাকায়।
এসব এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, শত শত বিঘা আখ চাষ হলেও নেই মিলের ব্যবস্থা। তাই শতভাগ গুড় প্রস্তুত করেন চাষিরা নিজেই। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সার প্রয়োগের কারণে এসব আখের রসে জমছে না গুড়। তাই ভারতীয় নিম্নমানের চিনির সঙ্গে আখের রস মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল গুড়। যা দেদারসে বিক্রি হচ্ছে হাট-বাজারে।
আখচাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, আখের সঙ্গে জমিতে লাগানো হয়েছিল রসুন। বেশি পরিমাণ সার প্রয়োগ না করলে রসুনের ফলন হবে না। তাই অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আখের জমি। আখের রসে জমছে না গুড়। তাই ভারত থেকে আসা চিনি দিয়ে জমানো হচ্ছে গুড়।
আসিকুর রহমান নামে আরও এক আখচাষি বলেন, একই জমিতে আখ, রসুন ও ধনিয়া চাষ করেছি। রসুন, ধনিয়া ঘরে তুলে বিক্রি করা প্রায় শেষ। এখন আখ মাড়াই করে গুড় বিক্রি করছি। কিন্তু চিনি ছাড়া জমছে না আখের গুড়। বাধ্য হয়ে ভারতীয় চিনি কিনে এনে গুড় জমাতে হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, সঠিক সময়ের আগেই আখ থেকে গুড় তৈরি ও জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০০ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। যা পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। এজন্য এসব জমির গুড় জমছে না। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ভারতীয় চিনি।
সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী উপকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোছা. কোহিনুর বেগম বলেন, মাটিতে রস থাকলে কিংবা জমিতে ইউরিয়া সার পরিমাণের চেয়ে বেশি ব্যবহার হলে আখের রসের গুড় জমাটবদ্ধ হয় না। এছাড়া বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলেও গুড় জমাটে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, ঝোলা গুড় উৎপাদন করা যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে রসুন, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করায় শক্তি হারাচ্ছে কৃষি জমি। ফলে জমছে না গুড়। তবে আমরা গবেষকদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়
জেলা সিভিল সার্জন ডা. কামাল উদ্দিন বলেন, চিনি মিশ্রিত হওয়ার কারণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে গ্রাম-বাংলার গুড়ের স্বাদ। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এসব গুড় খেলে হতে পারে নানা ধরনের রোগ। তাই এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।