
দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির, নানা নামের বিড়াল। তাও আবার চোখে চশমা, শরীরে বর্ণিল পোশাক, কপালে টিপ, মুখে মেকআপ করা। লালগালিচায় নানা ভঙিমায় ক্যাটওয়াক করছে বিড়াল।
ময়মনসিংহে বিড়ালপ্রেমীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে ‘প্রফেসরস পেট কেয়ার’ নামের একটি সংগঠন আয়োজন করেছে ‘ক্যাট শো’।
শনিবার বেলা ১১টায় নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে আয়োজন করা হয় ক্যাট শো, যা নগরের বিড়ালপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
প্রফেসরস পেট কেয়ারের পরিচালক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহমুদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশে বিড়ালের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। বিড়াল শুধু বিড়াল না, এটি পরিবারের সদস্য। পরিবারের এই সদস্যকে নিয়ে এখন মানুষ সময় কাটায়। ময়মনসিংহে যাঁরা বিড়াল লালন–পালন করেন, তাদের এক ছাতার নিচে আনার জন্য আমাদের এই আয়োজন।
তিনি জানান, এখানে বিড়ালের ভ্যাকসিনেশন, বিড়ালকে নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট; তার মধ্যে ক্যাটওয়াক, বেস্ট ক্যাট সিলেকশন, বিড়ালের ফ্রি হেলথ চেকআপ, বিড়ালের লালন–পালন ও রোগবালাই সম্পর্কে ধারণা দেওয়া ইত্যাদি ছিল।’
মাহমুদুল আলম আরও বলেন, বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বিড়াল লালন–পালন করেন। বিড়াল লালন–পালন করলেই হবে না, এর রোগবালাই ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানানোর জন্য এই আয়োজন।
বেলা ১১টায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিড়াল নিয়ে হাজির হন বিড়ালপ্রেমীরা। সাজানো বিড়ালগুলো নিয়ে মালিকেরা চেয়ারে বসে থাকেন, আদর করেন৷ ২০২৩ সালে প্রথমবার একটি সংগঠন ক্যাট শো করেছিল একই স্থানে। দ্বিতীয়বারের এই আয়োজনে কোকো, মিমি, মুলু, প্রিটি, ব্রাউনি, সিম্বি, জ্যাকসো, জোজো, পরী, মারলী, মিঠি, ইমু, লিও, জলিসহ নানা নামের বিড়াল অংশ নেয়। যেমন খুশি তেমন সাজ, প্রদর্শনী ও র্যাম্প শোতে অংশ নেয় ১৩০টি বিড়াল।
নগরের নতুন বাজার এলাকার গৃহিণী শাহানাজ মাইফুল নিজের ছেলে আফিদ আমিন চৌধুরীকে নিয়ে মেলায় আসেন। পার্সিয়ান জাতের দুটি বিড়াল ছিল মা-ছেলের হাতে। বিড়ালের শরীরে বর্ণিল পোশাক, চোখে চশমা। একটির নাম মুলু ও অন্যটির প্রিটি।
আফিদ আমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বাসায় বিড়ালগুলো আমাদের ভাইবোনের মতো। বাবা-মা আমাদের যেমন কেয়ার করে, তাদেরও এমন কেয়ার করে। পড়াশোনার ফাঁকে সময় কাটাই বিড়ালের সঙ্গে। মুঠোফোনে গেম খেলার চেয়ে বিড়ালের সঙ্গে খেলা করা অনেক ভালো। কারণ, বিড়াল খুবই বিশ্বস্ত, ওরা মানুষের মতো বেইমানি করবে না। মুরগির মাংস, মাছ ও ক্যাট ফুড খেতে দেওয়া হয়। আমাদের কথা শুনলে গিফটও দেওয়া হয়।’
শাহানাজ মাইফুল বলেন, ‘বিড়ালকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি। নাম ধরে ডাকলেই সাড়া দেয়। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিড়ালের জন্মদিন উদ্যাপন করি। জন্মদিন উপলক্ষে আলাদা করে মাছ বা মুরগি কাটা হয়। বিড়াল বাসায় থাকলে সুন্দর সময় কাটে, ডিপ্রেশন লাগে না। বিড়ালকে রোগমুক্ত রাখতে নিয়মিত চেকআপ করা হয়।’
শিক্ষক মাহমুদা হোসেন মেয়ে মাধুর্য মাহজাবিনকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের দুটি শখের বিড়াল নিয়ে এসেছেন। একটির নাম ব্রাউনি, অপরটির সিম্বি। দুটিই পার্সিয়ান প্রজাতির। মাহমুদা হোসেন বলেন, ‘আমার দুটি বিড়ালের একটি নারী ও একটি পুরুষ। বিড়ালগুলোর যখন দুই মাস বয়স, তখন থেকে লালন-পালন করছি। সংসার ও চাকরির পাশাপাশি বিড়ালের সঙ্গে আমার খুব ভালো সময় কাটে। পড়াশোনার বাইরে আমার মেয়ের বিড়ালের সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটে। এদের খাওয়াদাওয়া করানো, গোসল করানো আমার মেয়ে করে। ওরা নির্দিষ্ট জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে, তাই আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে না। ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলোর সবচেয়ে ভালো সময় কাটে বিড়ালের সঙ্গে। বিড়ালের আচার–আচরণ দেখলে মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে যাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন মেহের আফরিন। নগরীর কালীবাড়ি রোডের এই তরুণী একটি মিক্সড জাতের বিড়াল ৯ মাস ধরে লালন–পালন করছেন। নাম দিয়েছেন লিও। তিনি বলেন, ‘বিড়াল কাছে থাকলে মন খারাপ হয় না। বিড়ালটা এখন পরিবারের অংশ হয়ে গেছে।’
সিম্বা নামের একটি বিড়াল রয়েছে স্বর্ণালী সরকারের। কপালে লাল টিপ পরা। স্বর্ণালী সরকার বলেন, ‘প্রায় সময় আমি একা থাকি। সঙ্গে বিড়াল থাকলে খুব ভালো লাগে, একাকিত্ব দূর হয়। পাঁচ মাস ধরে বিড়ালটি আমার সঙ্গী। ওরে বকা দিলে বোঝে, আদর করলেও বোঝে। আমার সঙ্গে মিশে খেলাধুলা করে।’ অর্ণব সাহা বলেন, ‘আমার বিড়ালকে কোকো নামে ডাকি। চার মাস ধরে সে আমার সঙ্গী। আমার একাকিত্বের সময় ভালো কাটে। এ ধরনের আয়োজন বিড়ালপ্রেমীদের উৎসাহিত করবে।’
দেশি জাতের বিড়াল নিয়ে এসেছেন নাভানা ইসলাম। মিমি নামে ডাকেন বিড়ালকে। তিনি বলেন, ‘আগে আমার একটি বিড়াল ছিল, সেটি মারা যাওয়ার পর এক মাস আগে এই বিড়াল এনেছি। বাসায় সবাই বিড়াল ভালোবাসে।’ দর্শনার্থী মহিদ হোসেন বলেন, ‘জয়নুল আবেদিন উদ্যানে ঘুরতে এসে ক্যাট শোর ব্যানার দেখে এখানে এসে দেখি নানা জাতের বিড়াল। সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো।’