মো. সাজেদুল হক সাজু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে অনুমোদনহীন প্রায় শতাধিক ইটভাটা চলছে। ইটভাটার কালো বিষাক্ত ধোঁয়ায় আমবাগান সহ ফসলি জমিতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে আটক ও জরিমানা করে শেষ করছেন কার্যক্রম।
সদর উপজেলার মহানন্দা নদীর তীর বালিয়াডাঙ্গায় চলছে প্রায় ১০/১২টি ইটভাটা। আইন অনুযায়ী আমবাগান, জনবহুল গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকা সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইটভাটা পরিচালনা করা যাবেনা। কে শুনে কার কথা পরিবেশ অধিদপ্তর কে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটা।
বালিয়াডাঙ্গা শিমুলতলা এলাকার বাগান মালিক আব্দুস সামাদ জানান তার নিজস্ব ১০ বিঘা আম বাগান রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত আমের উতপাদন কমে যাওয়ায় বাগান এর আমফল বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
তিনি আরও বলেন তার সহ স্থানীয় মানুষের শত শত বিঘা আম বাগানের একই অবস্থা। এমতাবস্থায় বাগান মালিকগন অনেকে বড়ো বড়ো আমবাগানের গাছ কেটে ফেলেছে।
ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। তাদের প্রশ্রয়ে ইটভাটা চলমান রয়েছে। ভাটামালিকদের দাবি- প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো ইটভাটা এই আইন মানছে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সদর উপজেলায় ১১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ২০টির পরিবেশগত ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি ৯৩
টি ম্যানেজ করে চলছে।
জানা গেছে, অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট উৎপাদন ও ভাটা পরিচালনার মৌসুম। এই সময়ের মধ্যে লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য ইটভাটা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। যদিও গেল বছরের ২৮শে নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটাগুলো যাতে কার্যক্রম শুরু না করতে পারে, সেজন্য নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন উচ্চ আদালতের সেই আদেশ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ সব ইটভাটা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অবৈধ ইটভাটাগুলো নানাভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছে। এলাকার তিন ফসলি কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে এসব অবৈধ ভাটাতে। জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন গাছের কাঠ। মাটি বহন করতে ট্রাক্টরের চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। কৃষকের ফসল ধুলার স্তর পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিন ১০টি ইটভাটা ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সদর উপজেলার দিয়াড় অঞ্চলে আমবাগান, কৃষিজমি ও লোকালয়ে অসংখ্য ইটভাটা।
ইটভাটামালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, তার সমিতির কোনো ইটভাটার লাইসেন্স নেই। তাদের কাছে প্রতিবছর পাঁচ লাখ টাকা ভ্যাট নেয় কাস্টমস অধিদপ্তর। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরাও মাঝে-মধ্যে কিছু চাঁদা নিয়ে থাকেন। এভাবেই চলছে প্রতিটি ভাটা। তার দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শতাধিক ইটভাটা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে। এজন্য ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো অভিযান হয়নি।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক বলেন, সমিতি তাদের কাছে প্রশাসন ম্যানেজের জন্য টাকা নিয়েছে। টাকা দিয়ে তারা বাধাহীনভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তারপরও লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ২০টি ইটভাটার পরিবেশগত লাইসেন্স রয়েছে, আর ৯৩টি চলছে অবৈধভাবে।
সম্প্রতি এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে ৭টি ইটভাটার কাছ থেকে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ইটভাটাকে কার্যক্রম বন্ধে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. তাছমিনা খাতুন জানান অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনা রয়েছে। এসব ইটভাটা বন্ধে মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেউ ইটভাটা চালালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন অচিরেই অনুমোদনহীন ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিজান সুরু করা হবে। যেসব ভাটা মালিক সরকারি নির্দেশনা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।